মাহে রমজানে কুরআন খতম করার সহজ পদ্ধতি:
১) একবার শেষ করতে চাইলে প্রতি ফরজ নামাজান্তে মাত্র চার পৃষ্ঠা করে তেলাওয়াত করুন।
২) দুইবার শেষ করতে চাইলে প্রতি ফরজ নামাজান্তে মাত্র আট পৃষ্ঠা করে তেলাওয়াত করুন।
৩) তিন বার শেষ করতে চাইলে ১২ পৃষ্ঠা করে তেলাওয়াত করুন।
প্রতি ফরজ নামাজান্তে সমস্যা মনে হলে কোনো এক ওয়াক্তে জমা করে নিন, কিন্তু রমজান যেন কুরআন পরিপূর্ণ পঠন ছাড়া চলে না যায়। পাশাপাশি দৈনিক দুই চার লাইন করে মুখস্থ করার উপর জোর দিন।
তালেবে ইলমদের জন্য তো একবার দুইবারের হিসেবই আসবে না, অনেক বার পড়তে হবে। মুখস্থ করার কোশেশ করতে হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে কুরআনের আহল হওয়ার তাওফীক দিন।
ওহে যুবক যুবতী ভাই বোনেরা!
সবচেয়ে কঠিন নমনীয়তা হলো—
একজন বাবা তার সন্তানদের সামনে নত হয়ে পড়া।
তাই তোমরা কখনোই বাবাদের এমন চাপ দিও না,
যা তাদের গর্বকে চূর্ণ করে,
যখন তারা তোমাদের ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে অক্ষম হন।
তারা “উচ্চমূল্যের শিকল” এবং “দারিদ্র্যের হাতুড়ি”র মাঝে দোদুল্যমান থাকেন!
তাই “প্রয়োজনের অতিরিক্ত” বা “বিলাসিতার কিছু” তাদের কাছে চেয়ো না।
তাদের পাশে দাঁড়াও, তাদের বিরুদ্ধে নয়;
এবং তাদের অনুভূতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও, যত্নবান হও।
✍️শায়খ ড. বদর বিন আলী আল-উতায়বী হাফিযাহুল্লাহ।
🌹 এইভাবে ভেবেছেন কখনো?!
“মানুষের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে আল্লাহর নির্দেশনা রয়েছে, রয়েছে বিধিনিষেধ। প্রতিটা অঙ্গে আল্লাহর নেয়ামত রয়েছে, রয়েছে তাতে বান্দার বহুবিধ উপকার ও সম্ভোগ।
এখন বান্দা যদি সেই অঙ্গে আল্লাহর আদেশ মেনে চলে, নিষেধ থেকে বিরত থাকে; তবেই ঐ বান্দা তার উপরে থাকা ঐ অঙ্গ নামক নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করল, এর উপকারিতা ও উপযোগিতা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হলো- বোঝা যাবে।
পক্ষান্তরে যদি সে আল্লাহর আদেশ নিষেধের তোয়াক্কা না করে, তবে আল্লাহও তার ঐ অঙ্গের উপকারিতা কমিয়ে দেন; এমনকি এটাই তার দুঃখকষ্টের অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে যায়।
⏰একইভাবে প্রতিটা মুহূর্তে বান্দার কোনো না কোনো ইবাদত রয়েছে, যেটা তাকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে এবং নৈকট্য অর্জন করিয়ে দেয়। তো ইবাদতের মাধ্যমে সময়কে কাজে লাগাতে পারলে সে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হয়। আর যদি প্রবৃত্তি, সাময়িক স্বস্তি ও কর্মহীনতায় সময় পার করে, তবে সে (আল্লাহ থেকে) পিছিয়ে পড়ে।
বান্দা সবসময়ই আগুপিছুর মাঝে অবস্থান করে, এই পথে বিরাম নেই কোনো।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ “তোমাদের মাঝে যে এগিয়ে যেতে চায় অথবা পিছিয়ে পড়তে চায় (তাদের জন্য এই বাণী)”। (সূরা মুদ্দাসসির, ৩৭)”
✍️ ইবনুল কয়্যিম রহিমাহুল্লাহ।
📚আল-ফাওয়াইদ, ২৮০ পৃষ্ঠা।
“যে বান্দা অন্যকে ক্ষমা করতে পারে, সে সম্মানিত ও মর্যাদামন্ডিত হবে। আর যে বিদ্বেষী মনোভাব রাখবে, সে লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত হবে।
ফলাফল: ক্ষমাকারীরা সর্বদাই গৌরবান্বিত, হিংসুটেরা সর্বদাই ধিকৃত।
✍️শায়খ সালেহ আল-উসায়মী হাফিযাহুল্লাহ।
আপনারা জেনে থাকবেন যে, জিকির তিন প্রকার:
ক) শুধু মুখে মুখে জিকির,
খ) শুধু মনে মনে জিকির,
গ) মন ও মুখে একসাথে জিকির করা।
শেষোক্ত জিকিরটিই হলো আসল এবং মাতলুব। দ্বিতীয় জিকিরের ধরণ হলো, আল্লাহর আসমা ও সিফাত নিয়ে চিন্তা করছেন, কুরআন তেলাওয়াত শুনে সেটা নিয়ে ভাবছেন এগুলো।
৪) এটা ভাবা যে, সালাত আমাদের জন্য নিয়ামত, কোনো শাস্তি বা চাপিয়ে দেওয়া চাপ নয়।
এজন্যই রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “সালাতের মাঝেই আমার চক্ষুকে শীতল করা হয়েছে।” অন্য হাদীসে এসেছে, তিনি ﷺ বেলালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “হে বিলাল, সালাতের মাধ্যমে আমাদেরকে স্বস্তি দাও।” অতএব সবসময় আপনি এটা ভাবুন যে, আল্লাহ এই সালাতের মাধ্যমে আপনার প্রতি রহম করেছেন, কোনো বোঝা চাপিয়ে দেননি।
৫) এটা ভাবুন যে, আপনি মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
এদিকে ইঙ্গিত করেই আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক রহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ “সালাতে তাকবীর দেওয়ার মাধ্যমে আপনার এবং আল্লাহর মাঝে থাকা পর্দা উঠে যায়।”
সাহাবী, তাবেয়ী সহ অনেক ইমামদের থেকে বর্ণিত আছে, “মানুষ তাদের নামাজের সুরতে কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে আসবে।”
অতএব আপনি কিভাবে সেই মাঠে নিজেকে দেখতে চান, সেভাবে নামাজে দাঁড়ান।
৬) সালাতের সুন্নাত যথাযথভাবে সম্পাদন করা এবং মাকরূহ কাজগুলো থেকে বিরত থাকা।
সুন্নাত কওলী হোক বা ফে’লী, কথাগত বা কর্মগত, যেটাই হোক না কেন, যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই পালন করা।
নিম্নে কিছু মাকরুহ তথা অপছন্দনীয় বিষয় উল্লেখ করব:
ক) আয়নাকে সামনে রেখে নামাজ পড়া।
খ) আগুনকে সামনে রেখে নামাজ পড়া। (পূজা করার জন্য নয় বরং এমনি যদি কিবলার দিকে থাকে তবে)
গ) সামনে কোনো চিত্র বা দৃষ্টি আকর্ষণীয় কিছু থাকে।
ঘ) চোখ, নাক বন্ধ করা। একইভাবে পাথর, ময়লা পরিষ্কার করা।
কোনো সমস্যার কারণে উপরের কোনো একটা করা দরকার পড়লে তখন সে অবস্থায় সেটা আর মাকরুহ থাকবে না, মুবাহ তথা বৈধ হয়ে যাবে।
ঙ) এদিক ওদিক তাকানো। তবে এর পাঁচটি অবস্থা আছে:
১) পুরোপুরি কিবলার দিক থেকে অন্যদিকে ফিরে তাকানো। এটা করলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে।
২) আসমানের দিকে তাকানো। এটা হারাম, তবে সালাত হয়ে যাবে।
৩) চোখ দিয়ে অথবা মুখ ঘুরিয়ে ডানে বা বামে তাকানো। নামাজ হয়ে যাবে, তবে এটা মাকরুহ।
৪) কিবলার দিকে তাকানো। এটাতে সমস্যা নাই।
৫) সবসময় সিজার স্থানের দিকে তাকিয়ে থাকা। এটা মুস্তাহাব। তবে তাশাহহুদের সময় তর্জনীর দিকে তাকিয়ে থাকবে।
এই পঞ্চমটা বাস্তবায়ন যে করবে, তার খুশূ’ পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন হবে।
সালাতে খুশূ’ বাস্তবায়িত হওয়ার বাহ্যিক কিছু আলামত:
১) মুসলিমদের সাথে নম্র আচরণ করা। এদিকে ইঙ্গিত করে আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “খুশূ’ তোমার অন্তরের বিষয়। (তবে) তোমার পার্শ্ব যেন তোমার অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য নরম হয়।”
অতএব সালাতের খুশূ’র আবশ্যকীয় বাহ্যিক আলামত হলো, নম্রতা, তাওয়াযু’।
২) আল্লাহর জিকিরে অন্তরকে আগ্রহী পাওয়া। যে ব্যক্তি নামাজে আল্লাহর আয়াত ও হাদীসে বর্ণিত জিকির নিয়ে চিন্তা করবে, নামাজের বাইরেও সে এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
৩) সালাতে খুশূ’ বাস্তবায়নকারী ব্যক্তি সবসময় আল্লাহর কাছে খুশূ’ চাইবে। এ সম্পর্কে অনেক হাদীস আছে।
এর মাধ্যমে আমাদের আলোচনা শেষ হলো। আসলে খুশূ’র আলোচনা অনেক লম্বা। তবে আজকে আমার উদ্দেশ্য ছিল, ইলমের সাথে খুশূ’র সম্পর্ক জুড়িয়ে দেওয়া। কেউ যতো বেশি আলেম হবে, ফকীহ হবে, দ্বীনের জ্ঞান রাখবে, সে ততো বেশি খুশূ’ বাস্তবায়ন করতে পারবে।
✍️ ফযীলাতুশ শায়খ আব্দুস সালাম আশ-শুয়াইইর হাফিযাহুল্লাহ।
সংক্ষেপায়নে: ইয়াকুব বিন আবুল কালাম
গ) সালাতের রুকন ও ওয়াজিব বিষয়াবলী সঠিকভাবে সম্পাদন করা।
রুকন ও ওয়াজিবের মাঝে সূক্ষ্ম পার্থক্য হলো: রুকন ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বাদ দিলে নামাজ বাতিল হবে; ওয়াজিব বিষয় ইচ্ছায় বাদ দিলে নামাজ বাতিল হবে কিন্তু অনিচ্ছায় বাদ পড়ে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে। অতএব এই বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে সম্পাদন করতে হবে।
উল্লেখ্য, স্থানান্তরের সময়ের যে জিকিরগুলো আছে এগুলো দুই রুকনের মাঝে হতে হবে। যেমন, রুকু থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর দিতে হবে নিচু হওয়ার সময় থেকে সিজদায় পৌঁছা পর্যন্ত সময়ের মাঝে। কোনো ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তাকবীর বললে অথবা সিজদায় যাওয়ার পর তাকবীর বললে তার নামাজ হবে না। তবে দাঁড়ানো অবস্থায় শুরু করেছে যেতে যেতে শেষ হয়েছে, অথবা নিচু হওয়ার পর শুরু করেছে সিজদায় পৌঁছে শেষ হয়েছে তাহলে সমস্যা নাই।
অতএব যারা এই ওয়াজিবাত ও আরকান যথাযথভাবে পালন করবে, তারা খুশূ’র নিম্নস্তর পার করতে পারবে।
ঘ) প্রশান্তি।
সালাতের প্রতিটি রুকন অত্যন্ত ধীর ও প্রশান্তির সাথে করতে হবে। এটা একটি পূর্ণাঙ্গ রুকন।
অতএব আমাদের কাছে খুশূ’র সাথে সংশ্লিষ্ট সালাতের মাঝে চারটি রুকন রয়েছে:
ক) নিয়ত
খ) অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শান্ত থাকা
গ) সালাতের রুকন ও ওয়াজিব বিষয়াবলী সঠিকভাবে সম্পাদন করা
ঘ) প্রশান্তির সাথে সালাত সম্পাদন করা।
(আগামী পর্বে সমাপ্য ইনশাআল্লাহ)
সংক্ষেপায়নে: ইয়াকুব বিন আবুল কালাম
🚦 সতর্ক হোন!
সাফফারীনী রহিমাহুল্লাহ কিছু সাহাবী থেকে এরকম বর্ণনা এনেছেন যে,
“পিতা-মাতার জন্য দোয়া না করা সন্তানের জীবনকে সঙ্গিন করে তুলতে পারে।”
📚গিযাউল আলবাব, ১/৩০০।
💌নারীদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি:
• ইসলাম আপনাকে "জীবন" থেকে বঞ্চিত করে না, বরং ইসলামই আপনার প্রকৃত "জীবন”।
• ইসলামের সঙ্গে জীবন যাপন করুন আনন্দে, লজ্জাশীলতায়, সুখে, পবিত্রতায় ও আভরণে।
• ইসলাম আপনার মর্যাদা বাড়ায়, আপনার ইজ্জত আব্রু হেফাজত করে, আপনার সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে এবং আপনার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
অতএব “ইসলামের” সাথে থেকেই আপনার জীবন উপভোগ করুন, নিজেকে "সস্তা" করবেন না।
কারণ যে নারীই ইসলামের "সম্মানিত গুণাবলী" পরিত্যাগ করে, সে মূলত নিজের কাছে, অন্য নারীদের কাছে, সর্বোপরি পুরো মানব সমাজে মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
✍️ড. বদর বিন আলী আল-উতায়বী হাফিযাহুল্লাহ।
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি ও মেধা বিকাশ করবেন কিভাবে?
১) বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা। আর সর্বোত্তম যিকির হলো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা। ইস্তিগফার করা। "লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায-যলিমীন" পড়া।
২) ছালাত আদায় করা ও দীর্ঘ সাজদা করা। বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিন্তান্বিত কিছু পেয়ে বসলেই তিনি ছালাতে মনোনিবেশ করতেন।
৩) বেশি বেশি দোয়া করা, আল্লাহর দিকে রুজু করা ও মনকে তাঁরই আনুগত্যে ধরে রাখা। অতীত আলেমগণ কোনো মাসয়ালা বা কোনো বিষয় বুঝতে সমস্যায় পড়লে এরকমই করতেন।
৪) বেশি বেশি ছাদাকাহ করা; আর এই ছাদাকাহ মনকে যেমন শান্ত করে, তেমনি আল্লাহর অসন্তুষ্টিকেও দূর করে দেয়।
৫) বাবা-মার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং সন্তুষ্ট রাখতে সদা সচেষ্ট থাকা। ফলস্বরূপ, তাদের পক্ষ থেকে আপনার জন্য দোয়া।
৬) নিয়তে সততা ও সঠিকতা রক্ষা করে চলা। পাশাপাশি মনকে বারবার আল্লাহ ও কিয়ামতে তার জন্য কি রয়েছে সেটা স্মরণ করিয়ে দেয়া।
৭) সময় নষ্ট ও মানুষের সঙ্গ দেয়ার চেয়ে বেশি বেশি কুরআন পাঠ ও চর্চা করা।
৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর বেশি বেশি দরূদ পড়া।
৯) আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা এবং এই আয়াত স্মরণ রাখা: "তাদের রব তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলছেন, তোমাদের নর-নারী কারো কোনো আমলই আমি নষ্ট করে দিব না।" -(সূরা আলে ইমরান:১৯৫)
১০) নিজেকে ধৈর্যের উপর অটল রাখা ও তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার ব্যাপারে অভ্যস্ত করা।
(শায়খ محمد بن عمر بازمول এর পেজ থেকে অনূদিত।)
--ইয়াকুব বিন আবুল কালাম
১৩/০৫/১৪৪২হি:
30/12/2020
প্রশ্নঃ আহসানাল্লাহু ইলাইকুম, পিতা-মাতার কেউ যদি সন্তানকে মুস্তাহাব আমল বাদ দিতে বলে, তাহলে কি বাদ দিতে হবে?
উত্তরঃ জী, আপনার পিতা আপনাকে মুস্তাহাব আমল বাদ দিতে বললে আপনি তার কথা মানবেন। তবে আপনি তাকে সন্তোষজনক পদ্ধতিতে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন। তারপরেও যদি আদেশ দেয়, যেমন- ফরজ সালাতের সালাম ফেরানোর পর আপনার বাবা আপনাকে বলল, ওঠো, অর্থাৎ জিকির ও নফল নামাজ না পড়েই উঠে যেতে বলে; তবে আপনি তার কথা মেনে নিয়ে উঠে পড়বেন, বসে থাকবেন না।
আমি আপনাদের আগেও বলেছি, মূলনীতি হলো: বাবার আনুগত্য করতে হবে যতক্ষণ না কোনো পাপের আদেশ দেয় অথবা এমন কাজের আদেশ দেন যা ক্ষতিকর এবং তাতে কোনো প্রাধান্য যোগ্য মাসলাহাতও নেই।
আর আমাদের দ্বীনে পাপ সেটাই, যেটাতে কোনো ওয়াজিব তরক করা হয় আর নয়তো হারামে লিপ্ত হয়।
🎙️শায়খ সুলায়মান আর-রুহায়লী হাফিযাহুল্লাহ।
প্রশ্নঃ পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে সাবধানতা বশতঃ প্রতিবার অযূর সময় মোজা খুলে রাখার হুকুম কি?
উত্তরঃ এটা সুন্নাহর খেলাফ। এর মাঝে (শীয়া) রাফেযীদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে, যারা মোজা মাসাহকে জায়েয বলে না।
অথচ মুগীরা রাযিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মোজা খুলতে চাইলে তিনি তাকে বলেছেন: ছেড়ে দাও, আমি তো পবিত্র অবস্থাতেই পড়েছি।" এ বলেই তিনি মাসাহ করেছেন।
📝 ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, পৃষ্ঠা: ২২৮।
আলেমদের কাজ হলো:
-মুমিনদেরকে তাদের দ্বীনের উপর অটল রাখা
-দ্বীন হেফাজতের ব্রত পালন করা।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন তখনই কেবল সম্ভব, যখন তারা:
-আল্লাহর জন্য পূর্ণাঙ্গ ইখলাস নিয়ে তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য কাজ করবে,
-দুনিয়া লিপ্সা থেকে মুক্ত থাকবে এবং
-সৃষ্টির সন্তুষ্টির ব্যর্থ চেষ্টা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
✍️শায়খ সালেহ আল-উসায়মী হাফিযাহুল্লাহ।
দোয়ায় গোঁজামিল দেওয়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করুন: আরবীর জ্ঞান কম থাকা সত্ত্বেও নিজ থেকে শব্দ বানিয়ে বলা পরিহার করুন। এর মাধ্যমে বান্দা:
-শরীয়তে বর্ণিত দোয়া থেকে বিমুখ হতে শুরু করে,
-সমস্যাযুক্ত/নিষিদ্ধ শব্দের ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়।
এর থেকে বাঁচার উপায় হলো:
-শরয়ী দোয়া করা এবং
-এসব নবাবিষ্কৃত শব্দাবলি পরিহার করা।
✍️শায়খ সালেহ আল-উসায়মী হাফিযাহুল্লাহ।
(০২/০৮/২০২৩ ইং)
রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি দশ আয়াত পাঠ করে (রাতের) কিয়াম করবে, সে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। একশো আয়াত পাঠ করলে সে একনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এক হাজার আয়াত পাঠ করলে মহান সওয়াবের অধিকারী হবে।” অতএব যে ব্যক্তি দশ আয়াত হলেও পাঠ করবে, সে গাফিলতির খাতা থেকে মুক্ত থাকবে।
আপনি কি জানেন, হে ভাই/বোন, যদি প্রতি রাতে সূরা ফাতিহা -যার আয়াত সংখ্যা সাত- এবং সাথে সূরা ইখলাস -যার আয়াত সংখ্যা চার- পাঠ করে এক রাকাআতও পড়েন তাহলেও আপনি সেই ফজিলত লাভ করবেন?!
আর কোনো ব্যক্তি একশ আয়াত পাঠ করে রাতের কিয়াম করলে সেই রাতে সে একনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। যদি আপনি সাত রাকাআত পড়েন, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়লেই আপনার ৪৯ আয়াত পড়া হবে, তিন রাকাত বিতরে সূরা আ’লা, কাফিরুন আর ইখলাস পাঠ করলেই ২৯ আয়াত; তাহলে এখানেই মোট আয়াত সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৮ আয়াত! বাকি থাকল ২২ আয়াত। চার রাকাতে ছোট ছোট সূরা দিয়ে এই ২২ আয়াত পূরণ করলেই আপনি এই ফজিলত লাভ করতে পারবেন। এই ছোট্ট আমলের মাধ্যমে এত্তো মহান ফজিলত লাভ করা সম্ভব হলে কেন আমরা এই ফজিলত পেতে সচেষ্ট হব না?!
✍️শায়খ সুলায়মান আর-রুহায়লী হাফিযাহুল্লাহ।
(৩০/১০/২০২৪ ইং)
বইয়ের নাম : আকিদা লামিয়্যা ও তার ব্যাখ্যা
মূল : শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ
ব্যাখ্যা : আল্লামা আহমাদ আন-নাজমি রাহিমাহুল্লাহ
অনুবাদ ও টীকা : মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৬৯
🚦 আল্লাহর দিকে দ্রুত ধাবিত হবেন কিভাবে?
“তোমরা আল্লাহর দিকে পলায়নপর হও”
এর মানে হলো, দুনিয়াতে এমন কেউ আছে যে আপনার খারাপ চায়!
এই দুনিয়া সত্য থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার উপকরণে ভরা!
চারিপাশে আপনার কিছু শত্রু ওঁৎ পেতে আছে!
ওহে মুসলিম, আপনি শত্রুদের বেষ্টনীতে অবরুদ্ধ! এখান থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া?! (তো শুনুন)
“কোনো আশ্রয়স্থল নেই... সেই দিনে একমাত্র ঠিকানা হবে তোমার রবের কাছে।”
এ তো গেল আখিরাতের কথা। কিন্তু দুনিয়াতে এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি?
-আল্লাহর জিকির এবং ইলম অর্জন। এটাই আপনার দুনিয়াতে আল্লাহর দিকে অভিনিবেশের একমাত্র পথ।
“নিশ্চিত থাকুন, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।”
“‘মুফাররিদদরা অগ্রগামী হয়েছে’।
জিজ্ঞেস করা হলো, কারা তারা?
তিনি ﷺ বললেন, ‘যারা আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে, পুরুষ ও নারী উভয়ই’।”
“যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোনো পথে চলে, আল্লাহ তাকে সেই পথের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।”
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
🌹পিতা-মাতার সাথে আপনার জীবনের কোনো অর্জনই তুলনীয় হবার নয়!
হঠাৎ করেই আপনার বাবা মা মৃত্যু বরণ করবেন। তারপর আপনার অনুভূতি হবে:
-আপনি খুবই একা একা জীবন মরুতে ঘুরছেন!
- পিতা-মাতাহীন ইয়াতীম আপনি!
- খুবই ঠাণ্ডা অনুভূত হবে, কারণ উষ্ণতা যে তাদের সাথেই বিদায় নিয়েছে!
- ক্ষুৎপিপাসায় ভুগবেন, পরিতৃপ্তি তাদের দুজনের সাথেই চলে গেছে যে!
- নিজেকে লাঞ্ছিত অবাঞ্ছিত মনে হবে, সম্মান যে তাদের সাথেই কবরে গেছে!
- নিজেকে খুবই দুর্বল মনে হবে, শক্তিমত্তা যে তারা নিয়ে গত হয়েছেন!
উপরের সব অনুভূতিই আপনার হবে, স্বীকার করুন আর নাই করুন।
সেই সময় শুধু তাদের প্রতি আপনার ভালোবাসা, সদ্ব্যবহার এবং তাদের অভাব আপনার মনে জাগবে। এছাড়া কিছুই করার থাকবে না। অন্যথায় আপনি খুবই ধিকৃত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হবেন।
পিতা-মাতার সাথে আপনার জীবনের কোনো অর্জনই তুলনীয় হবার নয়!
যতই আপনি অহংকার করুন, যতই ধৃষ্টতা প্রদর্শন করুন, যতই ব্যস্ততার অজুহাত দেখান না কেন!
আয় আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার বাবা মায়ের সেবা করার এবং তাদের সাথে উত্তম আচরণ করার তাওফীক দিন।
মাবুদ ওগো! তারা ছোট্টবেলায় আমার প্রতি যেমন করুণা করেছে, তেমনি তুমিও তাদেরকে তোমার দয়ার চাদরে ঢেকে নাও।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
“জীবনের কর্মব্যস্ততা অন্তরের প্রশান্তি ছিনিয়ে নিচ্ছে। অতএব অন্তরকে ঈমানী শক্তি, প্রিয়জনের সঙ্গ আর শারীরিক স্বস্তির মাধ্যমে জাগরুক রাখতে না পারলে অন্তর:
-মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকবে,
-অস্বস্তিকর অনুভূতির মাধ্যমে দিন গুজরান করবে,
-সংকীর্ণতা ঘিরে ধরবে,
-সজীবতা হারাবে।
অতএব (সময় থাকতেই) রূহের প্রশান্তি নিশ্চিত করুন।”
✍️শায়খ সালেহ আল-উসায়মী হাফিযাহুল্লাহ।
🌹সালাতে খুশূ’ তথা আল্লাহর ভয় ও বিনয় নম্রতা বিষয়ে
।।০২।।
সালাতের খুশূ’র দ্বিতীয় প্রকার হলো, এমন কিছু বিষয় যেগুলো সালাতের পরিপূরক। এই বিষয়গুলো কোনো সময় পুরোপুরি অনুপস্থিত থাকলে সালাত হয়ে যাবে, তবে সওয়াব হবে না; শুধু ফরজিয়াত আদায় হয়ে যাবে। দলীল হলো রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “কোনো ব্যক্তি নামাজ পড়ে, কিন্তু নামাজের অর্ধেক, এক চতুর্থাংশ, এক তৃতীয়াংশ, এক পঞ্চমাংশ, এক ষষ্ঠাংশ, এক সপ্তমাংশ, এক অষ্টমাংশ, এক নবমাংশ, এক দশমাংস সওয়াব পায়; এমনকি কোনো সওয়াবই সে পায় না।” (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
কারণ কি? কারণ হলো নামাজের পরিপূরক খুশূ’ সে পুরোটাই বাদ দিয়েছে।
খেয়াল রাখতে হবে যে, এই বিষয়ে লোকজন সবাই কিন্তু এক স্তরের নয়। পাশাপাশি দুইজন লোক নামাজ পড়ছে, কিন্তু সওয়াবের ক্ষেত আকাশ পাতাল তফাৎ হতে পারে। এমনকি একই ব্যক্তির সময়ের ব্যবধানে খুশূ’ ওঠানামা করে। এজন্যই আব্দুল ওয়াহিদ বিন যিয়াদ তাবেয়ী বলেছেনঃ “আলেমরা সবাই এই মর্মে একমত যে, সালাতের ঠিক যতটুকু অংশে মনোযোগ থাকবে ততটুকুর সওয়াবই সে পাবে“।
এজন্যই মানুষের মাঝে এই খুশূ’তে বহু স্তরভেদ রয়েছে। সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছেন পিয়ারা নবী মুহাম্মাদ ﷺ। এজন্যই সতর্ক থাকবেন, যাকেই দেখবেন একটু বেশি কৃত্রিমতা করছে, রাসূল যা করেননি সেরকম কিছুর মাধ্যমে খুশূ’ ফুটিয়ে তুলতে চাচ্ছে; বুঝতে হবে সে সীমালঙ্ঘন করছে।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে পূর্ণাঙ্গ খুশূ’র সাথে সালাত আদায় করার ফজিলতে হাদীস উল্লেখ করব। উসমান ইবনে আফফান রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “ফরজ সালাতের সময় উপস্থিত হলে কোনো মুসলিম যদি সুন্দর করে ওজু করে, খুশূ’ ও রুকু পূর্ণভাবে আদায় করে; তবে তার জন্য কাবীরা গুণাহ বাদে বাকি গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। এটা সারা বছরের জন্যই।” (সহীহ মুসলিম)
অর্থাৎ সালাতের আগে সুন্দর করে অজু করে পূর্বে গত হওয়া চারটা আবশ্যকীয় খুশূ’র বিষয়গুলো এবং সামনে আগত পরিপূরক বিষয়াবলী সঠিকভাবে সম্পাদন করলে সারা বছরের সগীরা গুনাহের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে!
উল্লেখ্য, কাবীরা গুণাহের জন্য তাওবা অথবা ঐরকম বড় কোনো ইবাদত করতে হবে যেগুলো কাবীরা গুনাহকে মোচন করে দেয়। যেমন, হজ, রমাজানের সিয়াম, পুরো রমাজানের রাতের কিয়াম, এক জুম’আ থেকে আরেক জুমা; এই চারটি বিষয় সগীরা ও কবীরা উভয় ধরনের গুনাহের কাফফারা হয়। যেমনটা ইবনুল মুনযির ইমাম শাফেয়ী থেকে বর্ণনা করেছেন, আলেমদের এটা একটা কওল।
তো সালাতে খুশূ’র পরিপূরক বিষয়গুলো হলো:
১) দুনিয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা কমিয়ে দেওয়া।
সবাইকে সাধ্যমতো এই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। দুনিয়াবি চিন্তার কারণে নামাজ ভঙ্গ হবে না, এ ব্যাপারে সবাই একমত। এমনকি কোনো ওয়াজিব না ছুটে গেলে সাহু সিজদাও দিতে হবে না।
২) কলবকে যাবতীয় ব্যস্ততা থেকে ফারেগ করা।
যার অন্তর যতো ব্যস্ততামুক্ত হবে, আল্লাহর ভালোবাসা, আল্লাহর চিন্তায় ততোই নিমগ্ন হতে পারবে। এজন্যই আবু দারদা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সালাতের আগেই কলবকে ফারেগ করা ব্যক্তির দ্বীনী বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।” এজন্যই মূলত আজকে আমরা খুশূ’র ইলমী দিক নিয়ে আলোচনা করছি।
অন্তরকে ফারেগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “কোনো ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযথভাবে প্রশংসা, বড়ত্ব বর্ণনা এবং নিজের মনকে ফারেগ করতে পারে; সে যেন তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে”। (সহীহ মুসলিম)
সুবহানাল্লাহ, কতো বড় ফজিলত।
তাহলে কলবকে ফারেগ করার বুদ্ধি কি?
-রাসূল ﷺ কর্তৃক দেখিয়ে দেওয়া মাকরূহ কাজগুলো থেকে বিরত থাকা। সামনে আসবে সেগুলো।
-অতি দ্রুত নামাজে না আসা। এভাবে আসলে হাঁপাতে হাঁপাতে নামাজ শুরু করলে মনোযোগ বসানো কঠিন। এজন্যই আগেভাগে মসজিদে এসে নফল নামাজ পড়ে, দোয়া করে মনটাকে পূর্ণ মনোযোগী করার কোশেশ করবে। এভাবে নিজে পরীক্ষা করে দেখুন, ভালো ফলাফল পাবেন।
৩) অর্থ নিয়ে ফিকির করা। সেটা কুরআনের বিভিন্ন পঠিত আয়াত নিয়েও হবে, এমনি সালাতের পঠিত জিকির আজকার নিয়েও হবে।
এজন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল ﷺ আদী বিন হাতেম রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, “আদী, তুমি কি জানো আল্লাহু আকবার মানে কি?” আদী বললেন, কি অর্থ? রাসূল ﷺ বললেনঃ “এর অর্থ হলো, আল্লাহ সবকিছু থেকে বড়”।
আমরা কে এমন আছি যে, নামাজে তাকবীর দেওয়ার সময় আল্লাহু আকবার নিয়ে চিন্তা করেছি?! অর্থাৎ আল্লাহ এই দুনিয়ার সবকিছুর চাইতে বড়, আপনার অন্তর যেসব বিষয়ে ব্যস্ত হতে পারে সবকিছু থেকে অনেক অনেক বড়। রিজিক, ব্যবসা, সন্তানাদি ইত্যাদি সবকিছু থেকে আল্লাহ অনেক বড়।
তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে, আগে থেকে না জেনেই কেউ যেন আবার নামাজে এগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা নিয়ে গবেষণা শুরু না করে। কারণ তখন ইলম ছাড়া দ্বীনের কোনো বিষয়ে ভুলভাল চিন্তা ঢুকবে, শয়তান সেটাকে কাজে লাগিয়ে সালাতে ও সালাতের বাইরে মনকে আরো অশান্ত করে তুলবে। এজন্যই মানুষ যতো জ্ঞানী হবে, খুশূ’র পরিমাণ ও পূর্ণাঙ্গতা ততো বেশি হবে।
🌹সালাতে খুশূ’ তথা আল্লাহর ভয় ও বিনয় নম্রতা বিষয়ে
।।০১।।
আজকে আমাদের আলোচনা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হবে, যেটাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা মুমিনের গুণাবলী বলে উল্লেখ করেছেন। বরং তিনি মুমিনদের সফলতার গুণ বৈশিষ্ট্য বলতে গিয়ে এটাকেই প্রথম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ (মুমিনরা সফলকাম, যারা তাদের সালাতে খুশূ’ বজায় রাখে) -{সূরা মুমিনূন, ১-২}
আর উসূলবিদগণ এই আলোচনা এনেছেন যে, কোনো ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট কোনো গুণে গুণান্বিত করার পর সেই গুণের আলোকে কোনো হুকুম দেওয়া হলে সেই গুণটা মূলত সেই হুকুমের ইল্লত তথা কারণ বুঝায়; পরিভাষায় এটাকে ঈমা ইলাল ইল্লাহ (الإيماء إلى العلة) বলা হয়। অতএব এই বিষয় যে আল্লাহর কাছে সফলতার অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য তা প্রতিভাত হয়।
অতএব আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো: সালাতে খুশূ’। খুশূ’ হলো: আল্লাহর জন্য ভয় বিগলিত ও বিনয় নম্র হওয়া।
আসলে এ সম্পর্কে আলোচনা অনেক লম্বা। কেনইবা হবে না, এই খুশূ’কে সর্বপ্রথম মানুষের অন্তর থেকে উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং এটা যে কিয়ামতের অন্যতম আলামত। এজন্যই মানুষের বয়স যত বাড়বে, মানুষের মাঝে খুশূ’র পরিমাণও তত কম দেখতে পাবে।
তবে আজকে আমরা শুধু খুশূ’র ইলমী দিকটা নিয়েই আলোচনা করব। কারণ খুশূ’ সংক্রান্ত আলোচনা দুইটা শাখায় বিভক্ত:
ক) কলবের সাথে সম্পৃক্ত এবং
খ) ইলমের সাথে সম্পৃক্ত।
দ্বিতীয় শাখা সম্পর্কে মানুষ খুবই উদাসীন বলা যায়। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, ইলমের মাধ্যমেই খুশূ’ বাস্তবায়ন সম্ভব, এমনকি ইলম ছাড়া কোনটা খুশূ’ আর কোনটা নয় তা পার্থক্য করা যায়। কেননা মানুষ এমন অনেক বিষয়কে খুশূ’ হিসেবে গণ্য করে থাকে যেগুলোর সাথে খুশূ’র ন্যুনতম সম্পর্ক নাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আলেমদেরকে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ খুশূ’র অধিকারী আখ্যা দিয়ে বলেন: إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ “আল্লাহকে কেবল আলেমরাই পরিপূর্ণভাবে ভয় করে থাকে”। -(সূরা ফাতির, ২৮)
নিচের এই আয়াত নিয়ে চিন্তা করুন, যেটার ব্যাপারে আলেমরা বলেছেন যে, এটাতে অনেক কিছু শেখার আছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِن قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا (107) وَيَقُولُونَ سُبْحَانَ رَبِّنَا إِن كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا (108) وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا
“নিশ্চয় যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের নিকট যখন এটা পাঠ করা হয়, তখনই তারা চেহারা লুটিয়ে সিজদায় পড়ে। এবং বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান! অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে চেহারা লুটিয়ে (সিজদা) দেয় এবং এ (কুরআন) তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।” (সূরা ইসরা, ১০৭-১০৯)
এই আয়াতের প্রথমাংশ প্রমাণ করে যে, যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা মূলত আল্লাহকে জানে। অতএব যার জ্ঞান যতো বেশি হবে, তার খুশূ’র পূর্ণতাও ততো বেশি হবে।
এই আয়াতে প্রায় পঞ্চাশটির মতো ফায়েদা আছে, যার কারণে আজকের আলোচনা মূলত আমি এই আয়াতের উপরই করতে চাচ্ছিলাম; কিন্তু সময় সংকীর্ণ হওয়ায় মূল আলোচনা করেই ক্ষান্ত হব ইনশাআল্লাহ।
শাদ্দাদ ইবনে আওস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “ইলমের প্রথম বিষয় হিসেবে যা উঠিয়ে নেওয়া হবে তা হলো, খুশূ’। তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, কিন্তু কোনো খুশূ’ওয়ালা লোকের দেখা পাবে না!” (নাসায়ী)
সালাতে খুশূ’ দুই প্রকার:
১) সালাতের রুকন
২) সালাতের পূর্ণতা।
সালাতের রুকন অর্থাৎ কোনোভাবে সেটা ছুটে গেলে নামাজ হবে না, নামাজ দোহরাতে হবে। এরকম চারটি বিষয় আছে:
ক) নিয়ত।
নিয়ত নামাজের অন্যতম রুকন। এটা আবার দুই প্রকার: ¡) সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য
¡¡) ইবাদতের ধরণ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এটা ঠিক কোন নামাজ, ইবাদত হিসেবে করা হচ্ছে নাকি অভ্যাস বশতঃ।
এজন্যই অনেকের শরীর শান্ত থাকলেও মন তার ছটফট করে, এদিকে ইঙ্গিত করে আবু দারদা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “তোমরা মুনাফিকের খুশূ’ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও! আর মুনাফিকের খুশূ’ হলো: শরীর শান্ত কিন্তু মন তার অশান্ত!”।
খ) অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শান্ত থাকা।
হুযায়ফা, উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুম সহ আরো অনেক সালাফদের থেকে বর্ণিত হয়েছে, তারা এক ব্যক্তিকে সালাতের মাঝে খুব নড়াচড়া করতে দেখে বললেন, “এর অন্তরে খুশূ’ থাকলে শরীরও তার তাবেদারি করত”।
অধিক নড়াচড়া করা সালাত ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম কারণ। বেশি নড়াচড়া বোঝার উপায় হলো, বাইরের কেউ এই নামাজরত ব্যক্তিকে দেখলে মনে করবে সে বোধহয় নামাজ পড়ছে না! রুমাল, পাগড়ি, কাপড়, দাড়ি, মোবাইল ইত্যাদি নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করলে তার নামাজ হবে না।
#পরিত্যক্ত_সুন্নাহ-০৩
● “বিলুপ্ত হওয়া সুন্নাহ” অনুযায়ী আমল করা মানে আমল না করা লোকদের মাঝে “প্রসিদ্ধির আকাঙ্ক্ষা” বুঝায় না।
● তবে খেয়াল রাখতে হবে নিম্নোক্ত বাণী গুলোঃ
° আলী ইবনে আবি তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: «মানুষকে এমন কথা বলুন যা তারা বুঝতে পারে। আপনারা কি চান যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হোক?!»
° আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: «তুমি কোনো জাতিকে যদি এমন কোনো কথা বলো, যা তাদের বোধগম্য হয় না; তবে তা তাদের কারো কারো জন্য ফিতনার কারণ হবে।»
● সুতরাং, এ ব্যাপারে মধ্যমপন্থাই উত্তম; অতএবঃ
° ঢালাওভাবে এটা বলা যাবে না যে, সুন্নতের ওপর আমল করা যাবে না; ফলশ্রুতিতে সুন্নতকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হবে। এর ফলে সুন্নতগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ হারাবে।
° আবার এটাও বলা যাবে না যে, কোনো প্রকার ভূমিকা ছাড়াই সরাসরি সুন্নতের ওপর আমল শুরু করতে হবে! আর এর কারণে মানুষজন এটাকে অস্বীকার করে বসবে!
👉 মধ্যমপন্থা হলো: মানুষের মধ্যে এই সুন্নতের বৈধতা প্রচার করতে হবে এবং এ সম্পর্কে তাদের কাছে হাদিসগুলো পৌঁছে দিতে হবে। তারপর সুন্নতের ওপর আমল করতে হবে; তখন এতে কে খুশি হলো আর কে অসন্তুষ্ট হলো, সেটা দেখার দরকার নাই।
কেউ যদি এ কারণে “প্রসিদ্ধ” হয়ে যায়, তবে তা তার জন্য ক্ষতিকর নয়, কারণ তার উদ্দেশ্য প্রসিদ্ধি অর্জন নয়, বরং সুন্নতের ওপর আমল করা।
● আমি এ বিষয়ে ৩০ বছর আগে আমার "ইখবারুল আখয়ার বিমা ওয়ারাদা মিনাল আহাদিসি ওয়াল আখবার ফি হাল্লিল আযরার" গ্রন্থের ভূমিকায় আলোচনা করেছি। সেখানে দেখা যেতে পারে।
✍️শায়খ ড. বদর বিন আলী আল-উতায়বী হাফিযাহুল্লাহ।
সে বলল: অমুক তো বলে যে, "আমি মুফতী নই, আমি আলেম নই"; বরং সে তো একজন দা'ঈ মাত্র!
আমি বললামঃ এখানেই তো সমস্যার শুরু। কারো জন্য দা'ঈ হওয়া ঠিক নয় আলেম না হয়ে। আবার আলেম না হলে মুফতীও হতে পারবে না।
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, সে দা'ঈ হওয়ার যোগ্য নয়!
সে বললঃ কিন্তু তার তো অনেক জনসমর্থন আছে, ফলোয়ার অনেক!
আমি বললামঃ এটাই তো সব ফিতনায় পতিত লোকের ফিতনা। সুতরাং সেই ব্যক্তি যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং সে যার অধিকারী নয়, সে বিষয়ে আগ বাড়ানো থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে নিরাপত্তা তালাশ করে।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
প্রশ্ন: আমি কীভাবে আমার মনের বিচ্ছিন্নতা (অস্থিরতা) দূর করব?
উত্তর: মনের অস্থিরতার দুটি প্রধান কারণ রয়েছে:
প্রথম কারণ:
শিরক ও তাওহীদের অনুপস্থিতি। তাওহীদের প্রভাব ব্যক্তির জীবনে এমন হয় যে, এটি অন্তরে প্রশান্তি ও মনে স্থিরতা এনে দেয়। এর ফলে, মন বিভিন্ন মন্দ পরিস্থিতি ও মানসিক দুশ্চিন্তায় বিচলিত হয় না। আল্লাহ তা’আলা বলেন: “আল্লাহ উপমা দিয়েছেন: একজন মানুষ যাকে নিয়ে তার মালিকরা পরস্পর ঝগড়া করে এবং আরেকজন মানুষ যে সম্পূর্ণ একজনের অধীন; এরকম দুইজনের। এই দুই ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? সকল প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।” (সূরা যুমার: ২৯)
অন্যদিকে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করে, তার মন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সে মানসিক স্থিরতা হারায়। কোনোভাবেই আর মনকে একাট্টা করতে পারে না, মানসিক স্বস্তি লাভ হয় না। আল্লাহ তা’আলা বলেন: “এবং কিছু মানুষ জিনদের কাছ থেকে আশ্রয় চাইত, ফলে তারা তাদেরকে আরো বিপদে ফেলত।” (সূরা জিন: ৬)
দ্বিতীয় কারণ:
দুনিয়ার প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহ এবং আখিরাতের প্রতি উদাসীনতা। হাদিসে এসেছে, জাইদ ইবনে সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "যার মূল চিন্তা আখিরাত হয়, আল্লাহ তার সব বিষয় ঠিকঠাক করে দেন, তার অন্তরে অভাবমুক্তি দান করেন এবং দুনিয়া তার কাছে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আসে। কিন্তু যার মূল উদ্দেশ্য দুনিয়া হয়, আল্লাহ তার কাজগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেন, তার দারিদ্র্যকে তার চোখের সামনে রেখে দেন এবং তার জন্য দুনিয়া থেকে কেবল সেটুকুই নির্ধারিত থাকে যা তার ভাগ্যে লেখা আছে।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং: ২১৫৯০, সহীহ)।
অতএব যে ব্যক্তি আখিরাতের প্রতি মনোযোগ দেয়, তার মধ্যে মানসিক স্থিরতা ও শান্তি আসে। তার মন ও আত্মা এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়, যা তাকে আত্মপ্রশান্তি ও স্থায়ী মানসিক স্থিতি প্রদান করে।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টি ও আনুগত্যের পথে পরিচালিত করুন।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
আবু মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ﷺ সালাতে আমাদের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলতেনঃ “সোজা হও, বিভক্ত হয়ো না; নয়তো তোমাদের অন্তরই বিভক্ত হয়ে যাবে।”
মুমিনদের মাঝে মতভিন্নতা একটি নিন্দিত বিষয়। সালাফদের বুঝ অনুযায়ী শরীয়ত আঁকড়ে না ধরা অন্তরের বিভক্তির কারণ। অতএব সালাফদের বুঝ অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা আবশ্যক। আসলে এটা ছাড়া কখনোই একতাবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়।
অতএব হে সুন্নাহর অনুসারী! আপনারা বলুন “আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম” এবং এটার উপর অটল থাকুন। আল্লাহর ইচ্ছাধীন হয়ে একতাবদ্ধ হয়ে উঠুন, বিভক্ত হবেন না; পরে না আবার অন্তরই বেঁকে যায়!
সুন্নাহপন্থী ওহে! পুরো উম্মাহ আজ আপনার দিকে আশান্বিত নয়নে চেয়ে আছে। অতএব দ্বীন, আকীদা, সুন্নাহ ও মানহাজের হেমায়েত করতে কসুর করবেন না।
ওহে সুন্নাহর পাবন্দ! বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে মুসলিমদের আজ আবেগ উদ্বেলিত হচ্ছে আর সবাই এই আবেগ কাজে লাগাতে তৎপর! কেউ কেউ দ্বীনকে পৃথিবীর মোহাফেজের জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চেষ্ট, এর ফলাফল তো নাস্তিক্যবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার মাঝেই শেষ হবে।
কেউ আবার আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আহ এবং তাদের বিরোধী ফেরকাসমূহের আকীদাগত পার্থক্য দূরে ঠেলে পৃথিবী শাসনের দরস দিচ্ছে, এর ফলে কেবল সালাফী আকীদাকে দুর্বল করে দেওয়া হবে আর বিপরীত বিষয়কে করা হবে শক্তিশালী।
আবার কেউ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আহ এবং আহলুল বিদ’আ, ইখওয়ানুল মুসলিমুন যার শীর্ষে, তাদের মাঝের পার্থক্য ‘একতা’র নামে ভোলা ও ভোলানোর চেষ্টা করছে। ফলাফল স্বরূপ ইখওয়ানুল মুসলিমুন ও তার গর্ভজাত সন্তানগুলোকে “ভালো” বলে প্রচার করা হয়। যার কারণে আজকে আমরা এমনো লোক দেখতে পাই যারা বলে, ইখওয়ানুল মুসলিমুনের ভালো-মন্দ দুটোই আছে! তাদের সমালোচনাকারীদেরকে তারা গালমন্দ করে, এটাকে ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করে।
কেউ বলে: ইখওয়ানুল মুসলিমীনের তো শিক্ষা সংস্কারমূলক প্রোগ্রাম (Reformative educational program) আছে যেগুলোর বিরোধী কোন মুমিন হতে পারে না।
কেউ কেউ আবার বলেন: ইখওয়ানুল মুসলিমীন সম্পর্কে আজকে কথা বললে লোকেরা আমাদের কথা শুনবে না, তাই স্বার্থের খাতিরে এই জামাত সম্পর্কে কথা না বলাই ভালো! এই ধরনের আরো অনেক লেইম লজিক পেশ করা হয়।
ওহে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আহ! আপনাদের কাঁধে একটি বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। তাই আল্লাহর কসম! দ্বীনকে সর্বাগ্রে রাখুন। এর সীমানা পাহারা দিন, মন্দকে প্রতিহত করুন।
যার কাছে ইলম আছে, সে যেন তা ছড়িয়ে দেয়। আর যার কাছে ইলম নেই, সে যেন যার ইলম আছে তার ইলমকেই ছড়িয়ে দেয়।
ওহে মুসলিম যুবক-যুবতীরা! প্রবৃত্তি পুজারীদের কাছে তোমাদের মগজ বিকিয়ে দিও না। (না দিলেই) তোমরা সফল হবে।
✍️শায়খ সুলাইমান আর-রুহায়লী হাফিযাহুল্লাহ।
(২৮/১০/২০২৪)
🚦তালেবে ইলমদের জন্য মুরাজা’আ তথা রিভিশনের গুরুত্ব
“ক্লাসের পর মুরাজা’আ তথা রিভিশন না দিলে সেই পড়ার উপকারিতা নাই অথবা উপকারিতা নিতান্তই কম।
হে প্রিয় ভাইয়েরা! আমরা দারসে উপস্থিত হলাম, খাতায় কিছু নোট করলাম, কিন্তু বাড়ি গিয়ে সেটা আর রিভাইজ দিলাম না!
মুরাজা’আ তথা রিভিশনকে ইলমের সঞ্জীবনী সুধা বলা চলে। সত্যিই, মুরাজা’আ না করলে অনেক ফায়েদাই হারিয়ে যায়।
এই মুরাজা’আ না করার কারণেই বেশিরভাগ তালেবে ইলম কয়েক বছর চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারে যে, আসলে সে খুব বেশি ইলম অর্জন করতে পারেনি! এর মূল কারণ কিন্তু সে নিজেই। সে দারসে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে খুব তৎপর, কিন্তু মুরাজা’আ করার ব্যাপারে উদাসীন, দারস থেকে পাওয়া ফায়েদাগুলো মুখস্থের ব্যাপারে শিথিল!
অতএব, তোমাদের প্রতি অসিয়ত থাকবে হে প্রিয় ভাইয়েরা! এই মুরাজা’আর ব্যাপারে সচেতন হবে।”
🎙️আশ-শায়খ আল-মুরুব্বী সালেহ সিন্দী হাফিযাহুল্লাহ।
যখন ফিতনা ছড়িয়ে পড়ে, তখন
-মাহদী সম্পর্কে,
-কালো পতাকাধারী দল সম্পর্কে,
-মালহামা সম্পর্কে,
-স্বপ্ন সম্পর্কে,
-কারামাত সম্পর্কে,
-পবিত্র গ্রন্থের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে আলাপ আলোচনা বেড়ে যায়।
এতে করে
-সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ ঘটে,
-কল্পনার রাজ্য বিস্তৃত হয়,
-মানুষকে কল্পলোকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
যার ফলশ্রুতিতে মানুষ তৃণলতার মতোই ভেসে বেড়ায়, মরীচিকার পেছনে ছুটতে থাকে।
এর মাধ্যমে কত শত রক্ত ঝরে, কত মাল লুট হয়!
অতএব আপনারা শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান থাকুন।
✍️শায়খ সালেহ আল-উসয়মী হাফিযাহুল্লাহ।
(০৮/১১/২০২৩)
🚦 আলেমদের সম্পর্কে সুধারণা রাখুন!
তালেবে ইলমের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী, ইলম বুঝতে সহায়ক এবং আলেমদের ইলমের গভীরতায় পৌঁছতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর পন্থা হলো: আলেমদের সম্পর্কে সুধারণা রাখা।
এই কথা বললে মোটেও আশ্চর্যজনক হবে না যে, ইলমের তিনটা ভাগ আছে:
১ম ভাগে তালেবে ইলম নিজেকে সবচেয়ে জ্ঞানী মনে করে! আল্লাহ যাকে রহম করেন সে ব্যতিত।
২য় ভাগে পৌঁছলে মানুষের সাথে ন্যায়বিচার করা শেখে!
আর তৃতীয় স্তরে উপনীত হলে নিজেকে সবচেয়ে মূর্খ মনে করে!
প্রথম ভাগে থাকাকালীন সময়ে অন্যদের খন্ডন এবং আলেমদের ভুল ধরার প্রবণতা তার বেশি থাকে। সে এটা পছন্দ করে না, ওটা তার ভালো লাগে না!
এখানে দাঙ্গা লাগায় তো ওখানে ঝগড়া!
এখানে ইবনু হাজার আসকালানী নমনীয়তা (তাসাহুল تساهل) দেখিয়েছেন!
এখানে স্ববিরোধী হয়েছেন, ওখানে তিনি সঠিকতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছেন!
অমুক জায়গায় তিনি নিজের শর্তের বিরুদ্ধে নিজেই লিখেছেন!
এই জায়গাতে ইবনু হাজার আসকালানী অন্যান্য উসূলে হাদীসের পরিভাষাবিদদের বিপরীতে গেছেন!!
ইবনু হাজার আসকালানী এরকম কথা কেন বললেন, সেটা বোঝার মতো তার জ্ঞানও নাই সময়ও নাই!
তার মনে এই প্রশ্ন জাগে না যে, বর্ণনাকারীর অবস্থা এরকম হওয়া সত্ত্বেও ইবনু হাজার আসকালানী তার ব্যাপারে সিকাহ বা সদূক শব্দ কেন ব্যবহার করলেন!? এটা কি মানা যায়!
এই ধরনের পন্ডিতম্মন্য লোকের কাছে এই প্রশ্ন হওয়াও সম্ভব:
আরে ইবনু হাজার আবার কে?
সুয়ূতী কে?
আলবানী কি?
ইবনু বায আবার কেডা?!
ইবনু উসায়মীন কে?
বরং (আরো একধাপ এগিয়ে)
যাহাবী, ইবনু রজব এরা কারা?
ইবনু তায়মিয়া, ইবনুল কয়্যিম কোত্থেকে এলো এরা!?
কিন্তু ইলম অর্জন, পড়াশোনা, গবেষণা ও চিন্তাভাবনার নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টায় কিছুদিনের মাঝেই সে নিজের কাছে থাকা ইলমের দৈন্যতা ধরতে পারে! সে বুঝতে পারে যে, আসলে ওনারা সবাই একেকজন ইলমের পাহাড়সম ব্যক্তিত্ব।
অতীতে গত হওয়া আলেমদের তুলনায় আমরা তো খেজুর গাছের নিচে থাকা তৃণলতার মতোই! যেমনটা বলেছেন আবু আমর ইবনুল 'আলা রহিমাহুল্লাহ।
সে ধীরে ধীরে আবিষ্কার করতে থাকে, আলেমরা কেন এই কথা বলেছেন? তিনি কেন এমন কাজ করেছেন?
সে এমন এক জগতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকে, যেখানকার প্রতিটা পদক্ষেপ তাকে নিজের দীনতা বুঝিয়ে দেয়, দৈন্যতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। নিজেকে মনে হয় একঝাঁক মোরগের সাথে খাঁচার মাঝে সে একাই মুরগির ছোট্ট ছানা।
কিছুদিন যেতে না যেতেই সে নিজেকে "অনেক কিছুই জানে না" এরকম অবস্থায় পায়।
এর মূল চাবিকাঠি হলো: আলেমদের সম্পর্কে সুধারণা রাখা।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
নতুন পোশাকে দলান্ধতা...
“তুমি যতই হকের সাহায্যকারী হও না কেন, এটা তোমাকে মতভেদপূর্ণ মাসয়ালায় নিজ মতের বিপরীতে অবস্থানকারী কাউকে খাঁটো করার অধিকার দেয় না। তো তারা যে বলে:
১) আরে (মতের বিপরীতে) অমুক তো ছাত্র, আর আমাদের শায়খ আলেম। অথবা বলল:
২) যারা এই মতের বিপরীতে তারা তো অমুক দেশের, তাদের উপর বিবিধ চাপ আছে। কিন্তু আমাদের শায়খ তো স্বাধীন!!
ওয়াল্লাহি, আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের মাঝে এরকম কোনো কথা দেখি না। বরং এটা হলো দলান্ধদের পন্থা, যারা এইসব উল্টাপাল্টা ও অবাস্তব কথাবার্তা বলে আলেমদের মানহানি করতে চায়। এটা বলাও জায়েয নেই।
প্রিয় ভাইয়েরা, এই মানহাজ ও পদ্ধতি একই দেশের আলেমদের মাঝে বিদ্বেষ তৈরি করে। সময়ের পরিক্রমায় এই বিদ্বেষভাব বেড়ে যায়, তারপর নিকৃষ্ট ঘৃণিত দলান্ধতায় পরিণত হয়। ফলে অনেকেই নির্দিষ্ট শায়খের দল করে এবং তার যাবতীয় কথাকে সত্যজ্ঞান করে, কোনো ভুলের অবকাশ যেন নেই!!
এটাই হলো দুর্গন্ধযুক্ত নিকৃষ্ট দলান্ধতা, যা ছাড়তে হবে, এর থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সতর্ক সাবধান হতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেকেই এর মধ্যে পড়ে আছে, অথচ নিজেও সে বুঝতে পারে না।”
🎙️শায়খ সুলায়মান আর-রুহায়লী হাফিযাহুল্লাহ।
--[শরহু দালীলিত ত্বালিব, ৯ই সফর ১৪৪৩ হি: দারস থেকে।]
আবু উমামা আল-বাহিলী রাযিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে মসজিদে সিজদায় খুব কান্নাকাটি করতে দেখে বললেন: আরে তুমি! এই কান্না যদি বাড়িতে করতে!
এখানে মানুষের সামনে লৌকিকতা আর কৃত্রিমতা দেখানোর কি দরকার!? আল্লাহকে ভয় করো।
উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে ঘাড় নিচু করে বিনয়াবনত হতে দেখে বললেন: হে ঘাড়ওয়ালা, উপরে তোলো ঘাড়। খুশু’ তো ঘাড়ে না অন্তরে থাকে।
আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন: লোক দেখানো আমলকারীর তিনটা আলামত: ১) একাকী থাকলে ইবাদতে গড়িমসি করে আর লোকজন দেখলে খুব আগ্রহী হয়। ২) প্রশংসা পেলে ইবাদত বেশি বেশি করে, নিন্দা শুনলে ইবাদত কমিয়ে দেয়।
এক ব্যক্তি উবাদা বিন সামেত রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন: আমি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করব; এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মানুষের প্রশংসা! এই কথা শুনে তিনি বললেন: তোমার কিছুই পাওয়ার নাই।
তিনবার ঐ লোকটা একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিল আর সাহাবী একই উত্তর দিচ্ছিলেন। সর্বশেষে বলেন: “আল্লাহ বলেন, আমি শিকরকারীদের শিরক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।” এটা বলে এ সম্পর্কে রাসূলের হাদীস বর্ণনা করে শুনালেন।
ইরবায বিন সারিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুর উপনাম/কুনিয়াত হলো, আবু নাজীহ। তো তিনি বলেন: “লোকজন ‘আবু নাজীহ এরকম করেছেন’ এই কথা বলার আশঙ্কা না থাকলে আমি সব সম্পদ দান করে দিয়ে লেবাননের কোনো এক উপত্যকায় গিয়ে আমৃত্যু ইবাদত করতাম। কিন্তু আমার ভয়, লোকজন পরবর্তীতে এটা বলতে থাকবে যে, “আবু নাজীহ এরকম করেছেন”।
🎙️শায়খ মুহাম্মাদ বিন সাঈদ রাসলান হাফিযাহুল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে যাবতীয় লৌকিকতা এবং কৃত্রিমতা থেকে হেফাজত করুন, ছোট বড় শিরকবিহীন ইবাদত করার তাওফীক দিন। আমীন।