বুদ্ধি ও শুদ্ধি দুই চোখের ন্যায়। এই দুটির পূর্ণাঙ্গতায় কারো অবস্থা পূর্ণ হয়, আবার কমতিতে হয় ত্রুটিযুক্ত।
শুদ্ধির স্বচ্ছতা ছাড়া বুদ্ধির দুর্বরতা কখনো কল্যাণকর হয় না। কারণ এই বুদ্ধির দুর্বরতা মানুষকে আত্মপ্রবঞ্চনায় লিপ্ত করে, মন্দ সিদ্ধান্তে উপনীত করে; কেননা সে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধকারী ও মন্দ থেকে বাধাদানকারী আত্মিক পরিশুদ্ধতা হারিয়ে ফেলেছে!
অতএব সুসংবাদ ঐসব শুদ্ধ বুদ্ধির অধিকারী লোকদের জন্য।
✍️শায়খ সালেহ আল-উসয়মী হাফিযাহুল্লাহ।
(১৫/১১/২০২৩)
কোনো মুমিনের অন্তরে একই সাথে সাহাবীদের প্রতি ভালোবাসা এবং সাহাবীদের গালমন্দকারী ও তাদের বিদ্বেষীদের প্রতি ভালোবাসা একত্রিত হতে পারে না।
বিপরীতধর্মী দুটি বিষয় যেমন এক হয় না!
সাহাবীদের ভালোবাসা, তাদের উত্তম কর্মগুলি উল্লেখ পূর্বক তাদের জন্য রহমতের দোয়া করা, মাগফিরাতের দোয়া করা এবং তাদের মন্দ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকা ঈমানের অঙ্গ।
বিপরীতে তাদেরকে গালিগালাজ করা ও বিদ্বেষ রাখা কুফরী ও নিফাকি কাজ। এ ব্যাপারে অনেক দলীল আছে। তন্মধ্যে:
১) আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ﷺ আনসারদের ব্যাপারে বলেছেনঃ "একমাত্র মুমিন ব্যক্তিই তাদের ভালোবাসবে এবং কেবল মুনাফিক ব্যক্তিই তাদের ঘৃণা করতে পারে।"
২) আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ "ঈমানের আলামত হলো আনসারদের ভালোবাসা, আর নিফাকের আলামত হলো আনসারদের ঘৃণা করা।" -(বুখারী ও মুসলিম শু'বা রহিমাহুল্লাহর সূত্রে বর্ণনা করেছেন)
৩) রাসূল ﷺ আরো বলেছেনঃ "আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনা কেউ আনসারদের ঘৃণা করতে পারে না।" -(মুসলিম)
৪) আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ "নিম্নোক্ত চারজনকেই ভালোবাসা কেবল মুমিন ব্যক্তির মাঝে মিলিত হতে পারে: আবু বকর, উমার, উসমান ও আলী।"
হাম্মাদ ইবনু সালামা বলেন, আইয়ুব আস-সাখতিয়ানী বলেনঃ "আবু বকর সিদ্দিককে যে ভালোবাসবে সে দ্বীনকে ঠিক রাখবে। উমারকে ভালোবাসবে যে, সে সঠিক পথ পাবে। উসমানকে ভালোবাসলে দ্বীনের নূরে আলোকিত হবে। আর আলীকে ভালোবাসলে সে শক্ত হাতল ধরতে পারবে। আর যে ব্যক্তি সাহাবীদের ব্যাপারে উত্তম কথা বলবে, সে নিফাকি থেকে মুক্ত হবে।"
✍️শায়খ আব্দুস সালাম আস-সুহায়মী হাফিযাহুল্লাহ।
(০৬/১১/২০২৩ইং)
যে ব্যক্তি ধারণা করে, আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কেউ আক'সাকে মুক্ত করবে এবং ফি'লি'স্তিনে থাকা আমাদের ভাইদের সাহায্য করবে; সে শরীয়ত বিষয়ে যেমন অজ্ঞ তেমনি বাস্তবতা সম্পর্কেও মূর্খ। (কারণ) আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন সবার কাছে আহলুস সুন্নাহর রক্ত ইয়া'হুদীদের রক্তের চেয়েও সুপেয়।
আপনারা অতীত ইতিহাসকে এবং ঘটমান ব্যথাতুর ঘটনাকে জিজ্ঞাসা করুন।
হে ভাইয়েরা আমার -যে যেখানেই থাকুন- আক'সা নিয়ে খেলোয়াড়দের দেখে ধোঁকা খাবেন না এবং মুসলমানদের আবেগ নিয়ে তামাশায় লিপ্ত লোকদের দেখেও প্রতারিত হবেন না।
আপনারা (বরং) সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরুন, আহলুস সুন্নাহর সাথে নিজেদের জুড়ুন।
✍️শায়খ সুলায়মান আর-রুহায়লী হাফিযাহুল্লাহ।
(০৪/১১/২০২৩ ইং)
দ্বিতীয় খুতবা
আল্লাহরই প্রশংসা তাঁর নিয়ামতের, তাঁর তাওফীক ও অনুগ্রহের জন্য তাঁরই কৃতজ্ঞতা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি তাঁর রবের সন্তুষ্টির দিকে আহ্বান করেছেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের প্রতি এবং তাঁর মুসলিম ভাইদের প্রতি দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন।
অতঃপর,
আল্লাহকে ভয় করুন, সরল সঠিক পথকে আঁকড়ে ধরুন। বক্র পথ থেকে বিরত থাকুন, ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।" -(সূরা আন'আম, ১৫৩)
সঠিক পথ আঁকড়ে ধরার অন্যতম দিক হলো, উম্মাহর শান্তি ও ভীতির বিষয়াবলী শাসকদের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং সেসবে আগ না বাড়ানো। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোন বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। আর যদি তারা সেটি রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌঁছে দিত, তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না হত, তবে অবশ্যই অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা শয়তানের অনুসরণ করতে।" -(সূরা নিসা, ৮৩)
কারণ শাসকরা, কর্তৃত্বশীলরা (أهل الحل والعقد) জনসাধারণের চেয়ে তাদের সবার জন্য উপকারী বিষয়ে বেশি জানেন এবং কোনটা করা সম্ভব আর কোনটা সম্ভব না সেটাও তারা ভালো বোঝেন। জনসাধারণ যেমন আবেগ ও জোশের বশবর্তী হয়ে কোনো বিষয়ের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারে না এবং তার আগেপিছে কি অবস্থা হতে পারে তা ভাবে না, শাসক ও কর্তৃত্বশীলরা এরকম করেন না।
উপরোক্ত বিষয়াদি শাসকদের দিকে প্রত্যাবর্তন না করানোর অন্যতম কুফল হলো, কিছু লোক শাসককে কোনো বিষয়ে সশস্ত্র অংশগ্রহণ করতে বলে। সরকার অনুপ্রবেশ না করলেই তারা সরকারকে কা'ফের, মু'রতাদ ইত্যাদি বলতে থাকে, কারণ সরকার তাদের কথামতো ঐ বিষয়ে সাহায্য করেনি! মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে!! তো তারা এই ধরনের পরিস্থিতিকে তা'কফীর ও জনগণকে উস্কে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা শুরু করে, সম্পূর্ণ ইলমহীন ও হেদায়েতহীন পন্থায়।
আপনারা তাদের থেকে সতর্ক থাকুন। আমাদের ও আপনাদের জন্য তাদের খারাবির মোকাবেলায় আল্লাহ যথেষ্ট হয়ে যান।
হে আল্লাহ! আপনি ইসলাম ও মুসলিমদের সম্মানিত করুন, শিরক ও মুশরি'কদের অপদস্থ করুন। আপনার দ্বীনের শত্রুদের ধ্বংস করে দিন, আপনার তাওহীদবাদী বান্দাদের আপনি সাহায্য করুন।
প্রতিপালক! আপনি এই দেশকে এবং সব মুসলিম দেশকে নিরাপদ আবাসস্থল বানিয়ে দিন।
আয় আল্লাহ! আপনি আমাদের শাসক ও তার ওলীউল আহদকে তাওফীক দিন, তাদের সৎ কল্যাণকামী উপদেষ্টা দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন এবং ঐসব ভাইদের ক্ষমা করুন যারা আমাদের পূর্বে ঈমানের সাথে গত হয়েছেন। আমাদের অন্তরে মুমিনদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না। আপনি তো পরম দয়ালু ও অনুগ্রহশীল।
আয় মাবুদ! আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দিন এবং আখিরাতের কল্যাণ দিন। জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাঁচান।
ইজ্জতের প্রতিপালক আপনি মহাপবিত্র তারা যেসব কদর্য গুণ বলে থাকে তা থেকে। নবী রাসুলদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। প্রশংসা সবই আল্লাহর জন্য।
🎙️শায়খ আলী বিন ইয়াহিয়া আল-হাদ্দাদী হাফিযাহুল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ, বইটি বের হয়েছে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারেন।
Читать полностью…এই প্রশ্নটা এখন খুব হচ্ছে যে, ফি'লি:স্তিনে ঘটমান পরিস্থিতিতে শরয়ী অবস্থান কি হবে?
উত্তরঃ দুই ধরনের শরয়ী মাসয়ালায় তালেবে ইলমের কেউই ফতোয়া দেবে না, বরং সেগুলো গভীরতাসম্পন্ন আলেমদের সাথে সম্পৃক্ত:
১) পূর্বের কোনো আলেমের কথা নেই, এমন কোনো উদ্ভূত মাসয়ালা। যেমন, অঙ্গ দান করা ইত্যাদি।
২) এমন ব্যাপক বিষয় যা পুরো উম্মাহর সাথে সম্পৃক্ত, নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিবর্গের সাথে নয়।
চলমান ঘটনাবলী এই দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। অতএব শরয়ী দিকের ক্ষেত্রে আলেমদের উপর ছেড়ে দিতে হবে আর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি শাসকদের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
কিন্তু এটা তাকে মুসলিমদের সমব্যথী হতে, তাদের সাহায্যের জন্য দোয়া করতে প্রতিবন্ধক নয়। এই মুসলিমের মাঝে যত বিপরীত মতামতই থাক না কেন, বিদ্বেষ ও বিদয়াত থাক না কেন; তারপরেও সে অবশ্যই নবীদের হত্যাকারী সবচেয়ে নিকৃষ্ট ই"হু'দী জাত থেকে হাজারবার ভালো।
শায়খুল ইসলামকে রাফেযীদের উপর ই'হুদী ও খৃ"ষ্টানদের প্রাধান্য দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তা নাকচ করে বলেনঃ "মুহাম্মাদ ﷺ কর্তৃক আনীত দ্বীনকে বিশ্বাসকারী ব্যক্তি কাফেরদের চেয়ে উত্তম, যদিও সেই মুসলিমের মাঝে বিদয়াত থাকে; সেই বিদয়াতটা খারেজীদের বিদয়াত, শীয়াদের বিদয়াত, মুরজিয়াদের বিদয়াত বা আর যে ধরনেরই হোক না কেন।"
মুসলিম ব্যক্তি এই দোয়া বারংবার পড়তে মোটেও ভোলে না: হে আসমান জমিন সৃজনকারী আল্লাহ....তারা হকের বিষয়ে যেসব বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করো।
অতএব ফিতনার সময়ে একজন মুসলিমের জন্য দোয়াই একমাত্র ভরসা এবং মজবুত দুর্গ।
✍️শায়খ ইবরাহীম আল-মুহায়মীদ হাফিযাহুল্লাহ।
শেষ জামানায় বাস্তব অবস্থা উল্টো হয়ে যাবে: আলেমকে ছেড়ে জাহেলকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করা হবে। সত্যবাদীকে মিথ্যুক ও মিথ্যাবাদীকে সৎ বলা হবে। আমানতদার ব্যক্তিকে খিয়ানতকারী এবং বিশ্বাসঘাতককে নিরাপদ মনে করা হবে।
যারা নিজেরাও এগুলোর সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে যাবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত।
আর যে প্রমাণিত সত্যের উপর অটল থাকবে, সে সফলকাম।
🪶শায়খ সালেহ আল-উসয়মী হাফিযাহুল্লাহ।
"চতুর্মুখী ফিতনা: বাঁচব কিভাবে" বইটি নতুন ধাঁচে সম্পাদিত হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে ইনশাআল্লাহ।
বিস্তারিত:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=pfbid02cp5aiDKkq8eqadTVUpxUSheFjSZgEWoepn6hANfVqkMBdQ8ir2NMvaEw3PxUfjnNl&id=100052095526116&mibextid=Nif5oz
🚦জ্যোতির্বিদ্যা ও পত্রিকার রাশিফল সম্পর্কে
জ্যোতিষশাস্ত্রের ব্যবহারের দিক থেকে মানুষ সাধারণত তিনভাগে বিভক্ত:
১) গ্রহ, নক্ষত্র, তারকা ইত্যাদি সৃষ্টিজগতে ঘটমান ঘটনাগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারকারী। অমুক তারকার কারণে এই ঘটনা ঘটছে! এই ধরনের বিশ্বাস রাখা।
এই প্রকারটি কুফরে আকবার নিঃসন্দেহে এবং সব আলেমের ঐক্যমতে। এটা করত সাবেয়ীরা, পাশাপাশি তারা বিভিন্ন তারার ছবি লটকিয়ে রাখত বা ভাস্কর্য নির্মাণ করত। শয়তান এগুলোর মাঝে ঢুকে তাদেরকে এইসব মূর্তির পূজা করতে বলত।
২) বিভিন্ন তারকার উদয় অস্ত দেখে ভবিষ্যতে কি ঘটবে না ঘটবে সেগুলো বলার ও জানার দাবি করা।
এ প্রকারটি হারাম ও কাবীরা গুনাহ, ক্ষেত্রবিশেষে কুফর। মূলত শয়তান এদেরকে বিভিন্ন রকমের কথার যোগান দেয়। বাস্তবতা এদের অনেক কথাকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
৩) অভিজ্ঞতা ও প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন তারকার উদয়ে দিক নির্ণয়, সময় নির্ধারণ, চাষাবাদের সময় নির্ণয় করার পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা। যেমনটি আল্লাহ বলেন: "আর তারা তারকার মাধ্যমে পথ খুঁজে পায়।" -(সূরা নাহল, ১৬)
পূর্বের গুলো আর এটার মাঝে মৌলিক পার্থক্য হলো: আগেরগুলোতে তারকাই মূল প্রভাবক ছিল। কিন্তু তৃতীয় প্রকারে একটা আলামত হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র, প্রভাবক হিসেবে নয়।
🪷 বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ যে ব্যাপারে উদাসীন, অথচ সেটা হারাম জ্যোতির্বিদ্যার অন্তর্ভুক্ত। সেটা হলো: বিভিন্ন পত্রিকায় থাকা "রাশিফল"। তারা এর জন্য হয় পুরো পৃষ্ঠা নয়তো অর্ধেক হলেও বরাদ্দ রাখে। এটা তো এক প্রকার গণকী। পত্রিকায় এর অস্তিত্ব থাকার অর্থ হলো: গণক ও জ্যোতিষীর অস্তিত্ব রয়েছে এখনো সমাজে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ নেই, কোনো প্রতিবাদ নেই!
যদি কোনো ব্যক্তি এমনিতেই এগুলো দেখে, তাহলে সে যেন গণকের কাছেই গেল!
আর যদি কেউ নিজের জন্ম তারিখ বা পরিচিতজনের জন্ম তারিখ জেনে অথবা নিজেদের উপযোগী রাশি জেনে তা পড়ে, তবে সে যেন গণককেই জিজ্ঞাসা করল! এই কারণে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না।
আর যদি কেউ এগুলো বিশ্বাস করে, তবে সে যেন আল্লাহর রাসূলের উপর অবতীর্ণ কিতাবকে অস্বীকার করল।
উপরোক্ত বিষয়টা আপনাকে তাওহীদের গুরবাত, এই "কিতাবুত তাওহীদ" না পড়ার, না বোঝার অপ্রতুলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। প্রতিটা মুসলিমকে এটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। জেনেশুনে নিজেদের বাড়িতে এসব প্রবেশ করানো যাবে না, কারণ তার মানে হলো আপনি গণকীকে আপনার বাড়িতে ঢোকালেন! আর এটা তো কাবীরা গুনাহ।
অতএব প্রতিটা মুসলিমকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, এগুলো বর্জন করতে হবে, সাধ্যমতো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। যাতে করে গণক ও জ্যোতিষীরা ব্যর্থ হয়।
বিভিন্ন জায়গায় এই সমস্ত গণকদের ঘাঁটি আছে। ঐসব ঘাঁটিতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সুতরাং ছাত্রদের উপর আবশ্যক হলো: জনসাধারণের উদ্দেশ্যে দেওয়া খুতবা, নামাজের পরের দুই চার কথায়, মোটকথা যথাসম্ভব সর্বাবস্থায় তাদেরকে এইসব রাশিফল সম্পর্কে সঠিকটা জানাবে। কারণ এটা অনেক বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে গেছে, এর বিপক্ষে আওয়াজ নিতান্তই কম, মানুষের সচেতনতাও এক্ষেত্রে খুব নগণ্য। আল্লাহই উত্তম সাহায্যকারী।
📚আত-তামহীদ শরহে কিতাবিত তাওহীদ, শায়খ সালেহ আলুশ শায়খ হাফিযাহুল্লাহ। ৩২৯-৩৩৪ পৃষ্ঠা।
"কিছু লোক "আল্লাহর হুকুমের" নাম করে নিজেদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী মুসলিম দেশের উপর হামলে পড়ে, অথচ (তাদের উক্ত দাবিতে) ওরা মিথ্যাবাদী।
বিপরীতে কিছু লোক আবার দেশের ভালোবাসা ও প্রতিরোধের নামে নিজেদেরকে আড়ালে রাখে, অথচ ওরা চোর!
প্রথম শ্রেণি মিথ্যাবাদী (কৃতজ্ঞতা) অস্বীকারকারী। আর দ্বিতীয় শ্রেণি অভিশপ্ত চোর। দুই দলের লোক সংখ্যা অনেক।
বিশ্বস্ত আমানতদার ও সত্যপন্থীরা কতইনা সংখ্যালঘু!!
✍️শায়খ সালেহ আল-উসয়মী হাফিযাহুল্লাহ।
"নিজে নিজে শায়খ হওয়ার প্রতিযোগিতা এবং অন্যকে শায়খ বানানোর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটিয়েছে, যারা উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করছে: ইলমহীনতা বা আকলহীনতা বা সততা অথবা (তাদের মাঝে) সবগুলোরই সমন্বয় হওয়ার কারণে!
অতএব আপনারা চেহারা সুরত ও টাইটেল দেখে প্রতারিত হবেন না। বরং যিনি সততার সাথে দ্বীনদার, (যার কথায়) ইলমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এমন এবং পূর্ণ জ্ঞানবান বলে পরিচিত তাদের কাছ থেকেই ইলম অর্জন করুন।"
✍️শায়খ সালেহ আল-উসয়মী হাফিযাহুল্লাহ।
🚦 দৃষ্টি আকর্ষণ!
বাবা মা দু'জনই আছেন বা একজন আছেন এমন ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ!
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: তাদের সেবায় নিজেকে কতটুকু নিয়োজিত রাখতে পেরেছেন?
তাদের সেবা করার ক্ষেত্রে কি আপনি আলাদা কোনো বিশেষ ভূমিকা রাখতে পেরেছেন?
সহীহ মুসলিমের (হা/২৫৫১) হাদীসটি স্মরণ করুন!
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ নাক ধূলিমলিন হোক, নাক ধূলিমলিন হোক, নাক ধূলিমলিন হোক।
জিজ্ঞেস করা হল, কোন ব্যক্তির, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ "যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।"
আপনার পিতা-মাতার সেবার এ সুযোগটা হাতছাড়া করবেন না।
আমার উপদেশ শুনুন, আমি আপনার একান্তই হিতাকাঙ্খী।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
#পরিত্যক্ত_সুন্নাহ-০১
প্রশ্নঃ "পরিত্যক্ত সুন্নাহ" বোঝার মূলনীতি কি? বর্ণিত যেসব হাদীসে লোকজনের আমল নেই, সেগুলোকে কি আমরা পরিত্যক্ত সুন্নাহ হিসেবে গণ্য করব?
উত্তরঃ পরিত্যক্ত সুন্নাহ হলো, রাসূল ﷺ যেগুলো ইবাদত হিসেবে করতেন, কিন্তু মানুষেরা সেটা আমল করে না; সেটাই পরিত্যক্ত সুন্নাহ।
অতএব:
•যার সনদ প্রমাণিত নয়, সেটা সুন্নাহ নয়।
•সনদ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও সালাফগণ যেটার আমল করা থেকে বিরত থেকেছেন, সেটা সুন্নাহ নয়।
•সনদ প্রমাণিত, কিন্তু রাসূল ﷺ তা ইবাদত হিসেবে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য করেননি, সেটাও সুন্নাহ নয়।
•রাসূল ﷺ ইবাদত হিসেবে করেছেন এবং লোকজনও তা পরিত্যাগ করেনি, সেটা পরিত্যক্ত সুন্নাহ নয়।
রাসূল ﷺ থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হওয়াটাই পরিত্যক্ত সুন্নাহর মানদন্ড নয়, যতক্ষণ না তা "ইবাদত হিসেবে করেছেন" বলে প্রমাণিত হয়।
কিছু মানুষ এই ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে থাকে। কোনো বিষয়ে একটা সহীহ হাদীস পেলো এবং লোকদের মাঝে সেটার পরিচিতি দেখতে পেল না, অমনি তারা সেটাকে পরিত্যক্ত সুন্নাহ বলে থাকেন।
রাসূল ﷺ মানবিক চাহিদার ভিত্তিতে কোনটা করলেন, যেটাতে ইবাদতের উদ্দেশ্য ছিল না, আর সালাফগণ কোনটার আমল ছেড়েছেন- এগুলো কোনোটার মাঝেই তার কাছে কোনো পার্থক্য নেই। বরং এমনো দেখতে পাবেন যে, এই হাদীসটা মানসূখ হতে পারে বা মুতাশাবিহ হতে পারে বা মুখাসসাস তথা নির্দিষ্ট হতে পারে অথবা আরো অন্যান্য এরকম অনেক কিছুই হতে পারে- এই বিষয়টা তারা বেমালুম ভুলে যায়!
এজন্যই আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, কোনো মুসলিম যেন কোনো বিশুদ্ধ হাদীস পাওয়ার সাথে সাথেই সেটাকে পরিত্যক্ত সুন্নাহ দাবি করে না বসে।
আল্লাহ তাওফীক দিন।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
🚦 আরাফার দিন কোনটি?
বিসমিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু 'আলা রসূলিল্লাহ, আম্মা বা'দ:
আরাফার দিন ঠিক কোনটি- এই বিষয়ে আলেমদের মাঝে বেশ মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। এবং এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও মতভেদ দেখা যায়, তবে বঙ্গে এটা নিয়ে বেশ কড়াকড়ির একটি মাত্রা পরিলক্ষিত হয়। আমাদের অল্পবিস্তর পড়াশোনায় ইমাম ইবনু উসায়মীনের মতামতটি প্রাধান্যযোগ্য মনে হয়, পাশাপাশি বর্তমান যুগের অন্যতম সেরা আলেম শায়খ ফাওযানের বক্তব্যটিও আমরা এখানে উল্লেখ করব। সর্বশেষ নিজেদের পক্ষ থেকে একটু ফুটনোট উল্লেখ করে ইতি টানব ইনশাআল্লাহ।
🌹শায়খ ফাওযানের মতামত
প্রশ্নঃ যুল হিজ্জাহর চাঁদ দেখা ও আরাফায় অবস্থান করার ক্ষেত্রে কি চন্দ্রোদয়ের ভিন্নতার বিষয়টা দেখতে হবে?
উত্তরঃ হ্যা, একইভাবে আরাফার সিয়ামের ক্ষেত্রেও একই বিধান। আরাফায় অবস্থানের ক্ষেত্রে তো আর সৌদি আরবের চাঁদের সাথে ভিন্নতা নাই, কারণ হাজীরা তো সৌদির চাঁদেরই অনুসারী এক্ষেত্রে। সৌদির চাঁদ দেখলেই তারা সে অনুযায়ী মুসলিমদের সাথে আরাফার ময়দানে অবস্থান করবে।
কিন্তু আপনার প্রশ্নের উদ্দেশ্য যদি হয় যে, অন্য অঞ্চলে থাকা লোকেরা কি সৌদির চাঁদ দেখা অনুযায়ী সিয়াম রাখবে? এর উত্তরে আমরা বলিঃ "তাদের নিজেদের চাঁদ দেখা অনুযায়ী তারা পালন করবে।"
🎙️শায়খ সালেহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ।
https://youtu.be/uEVjtXNgpfg
🌹ইমাম ইবনু উসায়মীনের মতামত
প্রশ্নঃ বিভিন্ন অঞ্চলে চন্দ্রোদয়ের ভিন্নতার ফলে আরাফার দিন ভিন্ন ভিন্ন হলে আমরা কি নিজ দেশের চাঁদ অনুযায়ী সিয়াম রাখব নাকি হারামাইনের চাঁদ অনুযায়ী?
উত্তরঃ এটা মূলত "পুরো বিশ্বব্যাপী চাঁদের উদয়স্থল একই নাকি আলাদা?" এই মতভেদের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সঠিক কথা হলো: চাঁদের উদয়স্থল ভিন্ন ভিন্ন। মনে করুন, সৌদিতে চাঁদ দেখা গেছে আগে এবং আজ নয় তারিখ। অন্য একটি দেশে মক্কার একদিন আগে চাঁদ দেখা গেছে, তো আমাদের আরাফার দিন তাদের দশ তারিখ। তাদের জন্য তো এই দিন রোজা রাখা জায়েয নাই, কারণ এটা তো তাদের ঈদের দিন।
একইভাবে যদি কোনো দেশে মক্কার একদিন পর চাঁদ দেখা যায় তবে সেই দেশে মক্কার নয় তারিখ মানে তাদের আট তারিখ। তারা তাদের দেশের নয় তারিখ অনুযায়ী সিয়াম রাখবে,যেদিন মক্কায় দশ তারিখ হবে।
এটাই হলো প্রধান্যযোগ্য কথা। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "তোমরা চাঁদ দেখে রোজা ধরো এবং চাঁদ দেখে ছাড়ো।" আর যাদের দেশে চাঁদ ওঠেনি তারা তো তা দেখতেই পায়নি।
যেমনভাবে মানুষ নিজ নিজ এলাকায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত নিজেদের মতো হিসেব করে, -আর এটা তো সবার ঐক্যবদ্ধ (ইজমা) মত-, একইভাবে মাসিক হিসেবটাও দৈনন্দিন হিসেবের মতো হবে।
✍️ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসায়মীন রহিমাহুল্লাহ।
📚 মাজমূ' ফতোয়া, ২০ তম খন্ড, সিয়াম অধ্যায়।
নোটঃ উপরে ইমাম ইবনু উসায়মীনের বক্তব্য থেকে একটি বিষয় ফুটে ওঠে। যারা মক্কার একদিন আগে চাঁদ দেখে তারা কি তবে ঈদের দিন রাখবে? যদি রাখে তাহলে হাদীসের বিরোধিতা হলো, আর যদি না রাখে তাহলে আজীবনের জন্য তারা এই মহান ফজিলত থেকে মাহরুম! ইসলাম কি এতোটা সঙ্কীর্ণতা দিয়েছে?
আরেকটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়। আরবী ভাষায় বিভিন্ন ঘটনা বা অবস্থান বা প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে দিনের নামকরণ করা হয়ে থাকে, শুধু দিন নয়, বরং মাস বা বছরেরও নামকরণ হয়ে থাকে। যেমন রাসূলের জন্ম তারিখের আলোচনায় আমরা "আমুল ফীল" বা হস্তিবর্ষের লেখা দেখতে পাই। প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখকে আইয়ামে বীয বলা হয়। অন্য তারিখকে কিন্তু এটা বলা যাবে না। অনুরূপভাবে হজের আলোচনায় আমরা ধারাবাহিক ভাবে কি কি কাজ করতে হয়, এই আলোচনা পড়তে গেলে দেখব যে, আট তারিখকে ইয়াওমুত তারবিয়া (يوم التروية ) বলা হয়, নয় তারিখকে ইয়াওমু আরাফাহ বলা হয়েছে। সেদিন হাজীরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন বিধায় এই নাম এসেছে। কিন্তু ফিকহের বইগুলোতে আরাফার দিনের পরিচয়ের জায়গায় আবার যুল হিজ্জাহ মাসের নয় তারিখ লেখা আছে।
এছাড়াও যদি আরাফার দিনকে আমরা মক্কার সাথে খাস তথ নির্দিষ্ট করে দিই, তাহলে তাকবীরে মুকায়্যাদ কবে থেকে শুরু হবে- সেটা নিয়েও ঝামেলা তৈরি হবে।
সাবধানতা বশতঃ দুইদিন সিয়াম রাখার কথা বলা হলেও একটি দিনের সিয়াম দুইদিন একই নিয়তে রাখা বিদ'আত হবে কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। যদি কোনো ব্যক্তি জোহরের নামাজ পড়ার পরেও আসরের সময় "জোহরের নামাজ কবুল হলো কি হলো না?" এই আশঙ্কায় আবার আসরের সাথেও জোহরের নিয়ত করে সেটা অবশ্যই সুন্নাহ বিরোধী আমল হবে।
আল্লাহই ভালো জানেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে ইসলামের নিষ্কলুষ জ্ঞান দান করুন, আমলটুকু কবুল করুন। আমীন।
সঙ্কলনেঃ ইয়াকুব বিন আবুল কালাম
ওহে ছাত্র ভাইয়েরা!
মাতৃভূমি তোমাদেরকে দিয়ে এমন একটা প্রজন্ম গড়াতে চাচ্ছে, যারা মজবুত বন্ধনে, দৃঢ় মননে, মতাদর্শের চেতনে, গভীর জ্ঞানে এবং পারস্পরিক সহাবস্থানে অটুট থাকবে। দেশে মতাদর্শের এই বিশৃঙ্খলা তারা রুখবে, আমলহীন বেকারত্ব তাড়াবে, চিন্তাগত জড়তা বিদূরণে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি মানব জীবনে জেঁকে বসা অস্থিরতা দূরীকরণ এবং গুরুত্বহীন বিষয়ে গতানুগতিক ধাঁচের বিরোধ থেকে বিরত থাকবে।
কিন্তু তোমরা যদি রকমারি প্রবৃত্তির স্রোতে চলো, (শরীয়তের সাথে) অসঙ্গতিপূর্ণ কথায় নাচতে থাকো; তবে তো দেশের পুরো প্রজন্মকেই ধ্বংস করে দিলে, তোমরা নিজেরাও এই দেশের জন্য সমস্যা ও ঝামেলার ভার বাড়িয়ে দিলে। সর্বোপরি চিকিৎসার দেরী হওয়ায় অসুস্থতার সময়টাও দীর্ঘ করে দিলে!
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বুশায়র ইবরাহিমী রহিমাহুল্লাহ।
📚আল-আসার, ৩/২০১।
যখন ফিতনা ছড়িয়ে পড়ে, তখন
-মাহদী সম্পর্কে,
-কালো পতাকাধারী দল সম্পর্কে,
-মালহামা সম্পর্কে,
-স্বপ্ন সম্পর্কে,
-কারামাত সম্পর্কে,
-পবিত্র গ্রন্থের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে আলাপ আলোচনা বেড়ে যায়।
এতে করে
-সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ ঘটে,
-কল্পনার রাজ্য বিস্তৃত হয়,
-মানুষকে কল্পলোকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
যার ফলশ্রুতিতে মানুষ তৃণলতার মতোই ভেসে বেড়ায়, মরীচিকার পেছনে ছুটতে থাকে।
এর মাধ্যমে কত শত রক্ত ঝরে, কত মাল লুট হয়!
অতএব আপনারা শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান থাকুন।
✍️শায়খ সালেহ আল-উসয়মী হাফিযাহুল্লাহ।
(০৮/১১/২০২৩)
🚦 আলেমদের সম্পর্কে সুধারণা রাখুন!
তালেবে ইলমের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী, ইলম বুঝতে সহায়ক এবং আলেমদের ইলমের গভীরতায় পৌঁছতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর পন্থা হলো: আলেমদের সম্পর্কে সুধারণা রাখা।
এই কথা বললে মোটেও আশ্চর্যজনক হবে না যে, ইলমের তিনটা ভাগ আছে:
১ম ভাগে তালেবে ইলম নিজেকে সবচেয়ে জ্ঞানী মনে করে! আল্লাহ যাকে রহম করেন সে ব্যতিত।
২য় ভাগে পৌঁছলে মানুষের সাথে ন্যায়বিচার করা শেখে!
আর তৃতীয় স্তরে উপনীত হলে নিজেকে সবচেয়ে মূর্খ মনে করে!
প্রথম ভাগে থাকাকালীন সময়ে অন্যদের খন্ডন এবং আলেমদের ভুল ধরার প্রবণতা তার বেশি থাকে। সে এটা পছন্দ করে না, ওটা তার ভালো লাগে না!
এখানে দাঙ্গা লাগায় তো ওখানে ঝগড়া!
এখানে ইবনু হাজার আসকালানী নমনীয়তা (তাসাহুল تساهل) দেখিয়েছেন!
এখানে স্ববিরোধী হয়েছেন, ওখানে তিনি সঠিকতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছেন!
অমুক জায়গায় তিনি নিজের শর্তের বিরুদ্ধে নিজেই লিখেছেন!
এই জায়গাতে ইবনু হাজার আসকালানী অন্যান্য উসূলে হাদীসের পরিভাষাবিদদের বিপরীতে গেছেন!!
ইবনু হাজার আসকালানী এরকম কথা কেন বললেন, সেটা বোঝার মতো তার জ্ঞানও নাই সময়ও নাই!
তার মনে এই প্রশ্ন জাগে না যে, বর্ণনাকারীর অবস্থা এরকম হওয়া সত্ত্বেও ইবনু হাজার আসকালানী তার ব্যাপারে সিকাহ বা সদূক শব্দ কেন ব্যবহার করলেন!? এটা কি মানা যায়!
এই ধরনের পন্ডিতম্মন্য লোকের কাছে এই প্রশ্ন হওয়াও সম্ভব:
আরে ইবনু হাজার আবার কে?
সুয়ূতী কে?
আলবানী কি?
ইবনু বায আবার কেডা?!
ইবনু উসায়মীন কে?
বরং (আরো একধাপ এগিয়ে)
যাহাবী, ইবনু রজব এরা কারা?
ইবনু তায়মিয়া, ইবনুল কয়্যিম কোত্থেকে এলো এরা!?
কিন্তু ইলম অর্জন, পড়াশোনা, গবেষণা ও চিন্তাভাবনার নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টায় কিছুদিনের মাঝেই সে নিজের কাছে থাকা ইলমের দৈন্যতা ধরতে পারে! সে বুঝতে পারে যে, আসলে ওনারা সবাই একেকজন ইলমের পাহাড়সম ব্যক্তিত্ব।
অতীতে গত হওয়া আলেমদের তুলনায় আমরা তো খেজুর গাছের নিচে থাকা তৃণলতার মতোই! যেমনটা বলেছেন আবু আমর ইবনুল 'আলা রহিমাহুল্লাহ।
সে ধীরে ধীরে আবিষ্কার করতে থাকে, আলেমরা কেন এই কথা বলেছেন? তিনি কেন এমন কাজ করেছেন?
সে এমন এক জগতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকে, যেখানকার প্রতিটা পদক্ষেপ তাকে নিজের দীনতা বুঝিয়ে দেয়, দৈন্যতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। নিজেকে মনে হয় একঝাঁক মোরগের সাথে খাঁচার মাঝে সে একাই মুরগির ছোট্ট ছানা।
কিছুদিন যেতে না যেতেই সে নিজেকে "অনেক কিছুই জানে না" এরকম অবস্থায় পায়।
এর মূল চাবিকাঠি হলো: আলেমদের সম্পর্কে সুধারণা রাখা।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
গা'যার অধিবাসীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা এবং দোয়া ও সামর্থানুযায়ী তাদের সহযোগিতা করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য শরয়ী ওয়াজিব।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমরা অবিবেচক ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে এমন কোনো কাজ করব যা ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য আরো বেশি ক্ষতির কারণ হবে।
ওহে মুসলিম! নিজের দেশে ফিতনার বীজ বপন করার মাধ্যম হওয়া থেকে সতর্ক থাকুন।
গা'যাকে সাহায্য করা কখনোই মুসলিমদের মাঝে ফিতনার আগুন জ্বালিয়ে বা তাদের রক্ত ঝরার কৌশল তুলে দেওয়ার মাধ্যমে হতে পারে না।
আপনারা সেইসব লোকের কথা শুনবেন না, যারা আপনাদের আবেগ ও মনের ব্যথাকে কাজে লাগিয়ে নিজ দেশে ফিতনার আগুন জ্বালাবে এবং তার নিজের ও তার দলের মনোবাঞ্ছা পূরণ করবে!
আপনারা জ্ঞান ও বিজ্ঞতার পরিচয় দিন।
শরীয়ত অনুমোদিত এবং উদ্দিষ্ট সঠিক লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয় এরকম ক্ষেত্রে সাধ্যমতো সবকিছু দিয়ে গা'যাকে সাহায্য করুন। মুসলিমদের জন্য নতুন কোনো ধ্বংসযজ্ঞ যেন না নিয়ে আসে, তা খেয়াল রাখুন।
🪶শায়খ আলী আর-রমলী হাফিযাহুল্লাহ।
আমরা কিভাবে দুর্বল মুসলিমদের সহযোগিতা করব?
প্রথম খুতবা
প্রশংসা সবই আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, সাহায্য চাই তাঁর কাছে, তাঁর সমীপেই ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের নফসের খারাবি থেকে ও বদ আমলের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না; আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার আর কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের উপর দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন।
অতঃপর, আল্লাহকে ভয় করুন এবং তাঁর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরুন, ওহে আল্লাহর বান্দারা। আল্লাহ বলেনঃ "হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না। আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।" (সূরা আলে ইমরান, ১০২-১০৩)
জামা'আতকে আঁকড়ে ধরা আপনাদের জন্য আবশ্যক, কেননা আল্লাহর হাত জামা'আতের সাথেই রয়েছে। একাকী হলে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে একাকীই!
ঈমানদারগণ!
নবী ﷺ ভালোবাসা, মমতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি দিক থেকে মুমিনদেরকে একটি দেহের ন্যায় হতে নির্দেশ দিয়েছেন, যার কোনো একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে পুরো শরীরে সেই ব্যথা অনুভূত হয়। কেননা ঈমানী বন্ধন আসলে সবচেয়ে মজবুত, টেকসই এবং শক্ত বন্ধন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "নিশ্চয়ই মুমিনরা ভাই ভাই।" রাসূল ﷺ বলেছেনঃ "আল্লাহর বান্দা হিসেবে তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও।"
এই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের অন্যতম চাহিদা হলো, মুসলিম ভাইদের মাঝে কোনো বিপদ আপতিত হলে তাতে সমবেদনা জানানো, তাদের প্রতি কৃত অত্যাচারে পারস্পরিক সহযোগিতা করা, বিপর্যস্ত অবস্থায় মাল, খাবার ও ঔষধ সহ সবকিছু নিয়ে তাদের প্রতি হাত বাড়ানো। মুমিনদের মাঝে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সমবেদনাই যদি না থাকে, তাহলে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক থাকার কি ফায়দা!?
ওহে আল্লাহর বান্দারা!
বর্তমানে মুসলিমগণ বহুবিধ বিপদের মাঝ দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছে। কিছু জায়গায় যুদ্ধের লেলিহান শিখা জ্বলছে, কিছু জায়গায় বন্যা ও ভূমিধ্বস পরবর্তী ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এহেন পরিস্থিতিতে মুসলিম ব্যক্তির উচিত নিজেকে এই প্রশ্ন করা: এইরকম অবস্থায় আমি দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব রক্ষায় ও তার চাহিদা পূরণে কি করতে পারি?
উত্তরঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কাউকে তার সাধ্যাতীত কিছু চাপিয়ে দেন না। তিনি বলেনঃ "আল্লাহ কাউকে সধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না।" সেই সক্ষমতার মাঝে আমরা সবাই যেটা পারি সেটা হলো: বিপদগ্রস্ত সবার জন্য দোয়া করা, আল্লাহ যেন তাদের থেকে এই ঘোরতর বিপদ উঠিয়ে নেন, তাদের জন্য উত্তম ব্যবস্থা করে দেন, তাদের উত্তরণ ও মুক্তির পথ বাতলে দেন, দুঃখের পরে সুখের ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা দোয়ার আদেশ দিয়েছেন এবং দোয়া কবুল করারও ওয়াদা দিয়েছেন।
আরো যে বিষয় আমাদের সক্ষমতায় রয়েছে তা হলো: শাসক যখন আমাদের থেকে তাদের জন্য দানের আহ্বান করবেন, তখন আমরা দান করব; যেসব মাধ্যমে পাঠানোর অনুমোদন রয়েছে শুধু সেগুলোর মাধ্যমেই পাঠাতে হবে। কেননা, আমরা শাসকদের আনুগত্য করতে আদিষ্ট। আল্লাহর তাওফীকে আমাদের এই রাষ্ট্র এইসব দান গ্রহণ করে এবং যত্নের সাথে সেগুলো উপযুক্ত ব্যক্তির হাতে সমর্পণ করে।
অনেক চোর বাটপার এইসব বিপদকালীন সময়কে দানের মাল লুট করে নেওয়ার উপযুক্ত সময় মনে করে। ফলে তারা বিভিন্ন একাউন্ট খুলে মানুষদেরকে সেইসব একাউন্টে টাকা পাঠাতে বলে। অতএব আপনারা তাদের আবেগী কথায় ধোঁকা খাবেন না!
এখন জি'হাদের ডাক বা সশস্ত্র হয়ে সেখানে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে কথা হলো, এটা তো শাসকের অধিকারে। আলেমদের ভাষ্যমতে জি'হাদের বিষয়টা একমাত্র তারই উপর ন্যস্ত।
যারা যুবক ও অন্যদেরকে শাসকের অনুমতি ব্যতিরেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের দাওয়াত দেয়, তারা মূলত ফিতনা ও বিশৃঙ্খলার আহ্বায়ক। তারা না যুবকদের ভালো চায় আর না উম্মতে মুসলিমার কল্যাণকামী তারা।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার সুন্দর নাম সমূহ এবং সুউচ্চ গুণাবলীর মাধ্যমে মিনতি করছি যে, ফি"লি'স্তিনের দুর্বল মুসলিমদের উপর আপনি রহম করুন, তাদের মুক্তি ও উত্তরণের ব্যবস্থা করুন। তাদের জীবনকে নিরাপদ করুন, ইজ্জতকে হেফাজত করুন। তাদের অন্তরে ঈমানের বন্ধন দিন, তাদের ভিতরের ও বাইরের শত্রুদের মোকাবেলায় আপনি তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। নিশ্চয়ই আপনি মহাক্ষমতাধর, পরাক্রমশালী।
আমি নিজের জন্য ও আপনাদের জন্য সব পাপ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আপনারাও ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
দোয়া করাটা মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অধিকার:
হে আল্লাহ! আপনি আকসা ও তার অধিবাসীদের মুক্তি দিন, মুসলিমদের জন্য আপনি পাপিষ্ঠ ও মন্দ লোকদের খারাবির বিপরীতে যথেষ্ট হয়ে যান।
🪶শায়খ সালেহ আল-উসয়মী হাফিযাহুল্লাহ।
🚦তালেবে ইলমের যেসব আচরণ পরিহার করতে হবে
প্রশ্নঃ প্রাথমিক স্তরের তালেবে ইলমরা কি ধরনের ভুলে নিপতিত হয়? (আমাকে বলে দিন) যাতে করে আমি তা এড়িয়ে চলতে পারি।
উত্তরঃ এটা অনেক বিস্তৃত বিষয়।
তবে সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো: নিয়তের মাসয়ালা। কারণ আল্লাহ ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে শরয়ী ইলম অর্জন করা ব্যক্তি বিপথগামী হয়, ফলে সে এই ইলম থেকে উপকৃত হতে পারে না। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত কঠোর হুঁশিয়ারি তো রয়েছেই।
অতএব সর্বপ্রথম তোমার জন্য নিয়তকে খালেস করা ওয়াজিব, নিজের সাথে এ নিয়ে জিহাদ করে যাও।
দ্বিতীয়ত, তালেবে ইলমকে আত্মসম্মানবোধহীন করে দেয় এমন মন্দ আচরণ থেকে বিরত থাকবে। এটা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চস্তরের সবার জন্যই প্রযোজ্য। আলেমদের জন্য মানহানিকর যাবতীয় বিষয়াদি থেকে বিরত থাকবে, দূরে থাকবে।
তৃতীয়ত, আত্মঅহমিকা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকবে।
চতুর্থত, অহংকার থেকে দূরে থাকবে, বরং বিনয়-নম্রতা আবশ্যকীয়ভাবে আঁকড়ে থাকবে।
পঞ্চমত, ইলম অন্বেষণে লজ্জাকে দূরে রাখবে। কারণ অতি লজ্জাশীল যেমন ইলম অর্জন করতে পারে না, তেমনি অহঙ্কারী ব্যক্তিও ইলম থেকে মাহরুম হয়। অতএব সে এই দুটি বিষয় থেকে বিরত থাকবে:
-এমন লজ্জা, যা তাকে তার প্রয়োজনীয় বিষয় জানতে ও জেনে নিতে বাঁধা দেয়।
-এমন অহংকার, যার মাধ্যমে সে নিজেকে অনেক বড় ভাবে আর অন্য মানুষকে অতি তুচ্ছ ভাবে।
ষষ্ঠত, ইলম অর্জনে যাদের সঙ্গ তার ক্ষতি করে, তাদেরকে এড়িয়ে চলবে। যেমন, অলস, অকর্মণ্য ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে; কারণ এরা তাকে নিজেদের বদভ্যাসের দিকেই টানবে। অতএব সে কেবলমাত্র সেইসব জাত্যাভিমানি ছেলেদের সাথেই উঠাবসা করবে, যারা তাকে হাত ধরে ইলম অর্জনের কষ্ট-ক্লেশময়, কণ্টকাকীর্ণ পথে চলবে, চালাবে।
সপ্তমত, সময় নষ্ট করা থেকে বেঁচে থাকবে।
ছাত্র জীবনে একজন ছাত্রকে উপরোক্ত এই বিষয়াবলী থেকে সর্বোত বিরত থাকতে হবে। এগুলো সে পালন করলে তার অনেক উপকার হবে ইনশাআল্লাহ।
🪶শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাদী আল-মাদখালী হাফিযাহুল্লাহ।
২৮ শে সফর, ১৪৪১ হিজরী, রোববার ইশার সালাতের পর শায়খ হাফিযাহুল্লাহ বদরী আল-উতায়বী মসজিদে এই উত্তর দেন। লিখিত আকারে الأخلاق التي يجتنبها طالب العلم নামে প্রকাশ করেছেন শায়খের ছাত্র উমার নাসের আশূর ওয়াফফাকাহুল্লাহ।
ইসলাম হলো দুর্গ স্বরূপ, সাহাবীরা হলেন এর দরজা আর আলেমগণ তার প্রহরী। শত্রুরা এই দুর্গে আক্রমণ করতে চাইলে আগে প্রহরীদের দিকে তীর নিক্ষেপ করে, প্রহরীরা ধরাশায়ী হলেই তারা দরজা ভেঙে ভেতরে হামলে পড়বে। আর দুর্গের ভিতরে তারা বিকৃতি ও জালিয়াতির সয়লাব চালিয়ে দেবে।
আমাদের আলেমদের ব্যাপারে সমালোচনাকারীদের মূল কুরুক্ষেত্র হলো এটাই; অতএব আপনারা এই ব্যাপারে সচেতন হোন, আলেমদের পক্ষ হয়ে (সমালোচনাকারীদের) প্রতিবাদ করুন। কারণ আল্লাহ ও মুমিনগণ দুর্গ এবং প্রহরীদের উপরে হামলা করা মেনে নেন না।
🪶শায়খ সালেহ আল-উসয়মী হাফিযাহুল্লাহ।
মীলাদুন্নবী প্রসঙ্গে
ঐতিহাসিক ও আলেমদের ঐক্যমতে রাসূল ﷺ রবীউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখে মৃত্যু বরণ করেন। প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী তাঁর জন্ম হয়েছিল ১২ই রবীউল আওয়াল মাসে। অর্থাৎ একই মাস ও একই তারিখ, শুধু সাল আলাদা।
পরবর্তী গবেষকদের মতে, রাসূলের জন্মদিন সোমবার হিসেবে মিল করতে গিয়ে তা ৯ তারিখ বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
যেটাই হোক না কেন, রবীউল আওয়াল মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যু বরণ করেছেন এটা নিশ্চিত। ১২ তারিখে মৃত্যু বরণ করেছেন, এটাও সুনিশ্চিত।
এখন যদি কেউ এই তারিখকে রাসূলের জন্মদিন হিসেবে ধরে ঈদ তথা আনন্দোৎসব করে, তা কতটুকু ভালোবাসার পরিচায়ক হবে? মানুষের বিবেকেও বা কতটুকু সঠিক হবে?
বরং রাসূলের ভালোবাসাতে সত্যবাদী হলে তো শোক দিবস পালন করা উচিত ছিল।
জন্ম তারিখ ভিন্ন হলেও কি এই আনন্দোৎসব সঠিক হতে পারে? কিভাবে হবে? আরে এই মাসে তো রাসূল ﷺ মৃত্যু বরণ করেছেন! মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আপনি রাসূলের বিয়োগব্যথা ভুলছেন কিভাবে?
আপনার ভালোবাসা শূণ্যগর্ভ নয়তো?!
সাহাবীগণ কি আপনার আমার চেয়ে রাসূলকে কম ভালোবেসেছেন?! কৈ তারা তো এইরকম কোনো দিবস উদযাপন করেননি!! অথচ তারা রাসূলের জন্ম ও মৃত্যু দিন সম্পর্কে বেশি জানতেন।
দলীলের দিকে যাব না। ইসলামের সঠিক বুঝ মানুষের ফিতরাতের সাথে রাখা হয়েছে। আপনার বিবেক খাটান। টনক নাড়ান। ইনশাআল্লাহ উত্তর পেয়ে যাবেন।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক সমঝ দান করুন। রাসূলের ভালোবাসায় অন্তরকে পূর্ণ করে দিন। রাসূলের পূর্ণ আনুগত্য করার তাওফীক দিন। আমীন।
প্রশ্নঃ আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় "নিহত হব" এই নিয়তে কি যুদ্ধ করা জায়েয আছে?
উত্তরঃ
নিহত হওয়ার জন্য যুদ্ধ করা জায়েয নেই। বরং যুদ্ধ করতে হয় একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য, তাঁর কালেমা বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ যদি আপনাকে শাহাদাত দান করেন, তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। শাহাদাত না দিলে আপনি সওয়াব ও গণিমত নিয়ে ফিরে আসবেন।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উপরোক্ত কথাকে স্পষ্ট করে:
১) জিহাদ হয় আক্রমণাত্মক হবে নয়তো প্রতিরোধমূলক, তবে উদ্দেশ্য আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করা। তাহলে আপনার কথামতো জিহাদ যদি "আপনি শহীদ হিসেবে নিহত হবেন" এই উদ্দেশ্যে বিধিবদ্ধ হতো, তবে তো অর্থ এরকম দাঁড়াবে যে, আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার জন্য জিহাদের বিধিবদ্ধতা বাতিল হয়ে যাবে। সর্বশেষ ফলাফল এই দাঁড়াবে যে, মুসলিম শুধু শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষায় মৃত্যু কামনা করবে, আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে নয়; জিহাদের যে প্রকারই হোক না কেন।
২) শাহাদাত দ্বারা যদি কেবল যুদ্ধের মাঝে নিহত হওয়াই উদ্দেশ্য হতো, তবে বর্ম পরিধান করা, হেলমেট পড়া এবং শত্রুদের আঘাত ও তীর থেকে বাঁচার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া মুস্তাহাব হতো না। এর আরো অর্থ দাঁড়াবে যে, রাসূল ﷺ যখন এগুলো পড়েছেন, তখন তিনি শাহাদাতের তামান্না করেননি!! আলোচ্য কথকের কথা অনুযায়ী।
৩) যুদ্ধের ময়দানে নিহত হতে চাওয়া শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষায় যারাই যুদ্ধের ময়দানে নিহত হবে, সবাইকে তো তাই বলতে হবে। অথচ নির্দিষ্টভাবে এই বিষয়ে হাদীস এসেছে: "আল্লাহই ভালো জানেন কে তাঁর পথে জিহাদ করছে।" অর্থাৎ ময়দানে যারাই নিহত হবে, তারাই শহীদ হবে না।
যেসব আলেমরা শহীদি মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষার বৈধতার আলোচনা করেছেন, তারা মূলত আমাদের প্রথম পয়েন্ট উদ্দেশ্য করেছেন: আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার জন্য আল্লাহর পথে জিহাদ করতে হবে। শাহাদাত পেলে ভালো, নচেৎ সওয়াব ও গণিমত নিয়ে ফিরবে।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
"মহান আলেমদের সম্মান দেওয়া ছাড়া কেউ দলীলের অনুসরণ করছে বললে তার কথা বিশ্বাস করবেন না। সুন্নী ব্যক্তি যেমন দলীলের অনুসরণ করে, তেমনি আলেমদের পথে চলে।
আর মুমিনদের পথের অনুসরণের অন্তর্ভুক্ত অন্যতম বিষয় হলো: আলেমদের সম্মান করা ও মর্যাদা দেওয়া।
অতএব দলীলকে সামনে রাখতে হবে এবং আলেমদের সম্মান করতে হবে।"
✍️শায়খ সালেহ আল-উসয়মী হাফিযাহুল্লাহ।
"মুহাররমের দশ তারিখের সাথে নয় তারিখ মিলিয়ে রোজা রাখার বিধানের পিছনে একটা গুরুত্বপূর্ণ আকীদার পাঠ নিহিত রয়েছে, যেটা বোঝা জরুরি।
আর সেটা হলো: কাফেরদের বিরোধিতা ও তাদের সাদৃশ্যতা থেকে বিরত থাকা।
এটাই ছিল রাসূল ﷺ এর ইবাদত ও আদতের (স্বাভাবিক চলাফেরায়) ক্ষেত্রে চিরাচরিত রীতি।"
✍️শায়খ ড. সালেহ আস-সিনদী হাফিযাহুল্লাহ।
#পরিত্যক্ত_সুন্নাহ-০২
পরিত্যক্ত সুন্নাহ সম্পর্কে কয়েকটি জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ
🌹জ্ঞাতব্য-১: কোনো হাদীসের সনদ সহীহ হওয়া মানেই সেটা সুন্নাহ নয়। কারণ হাদীসের মাঝে:
•'আম মাখসূস তথা নির্দিষ্টতা-বোধক ব্যাপকার্থের হাদীস আছে।
•মুতলাক মুকায়্যাদ তথা শর্তযুক্ত হাদীস আছে।
•মুহকাম নয়, বরং মুতাশাবিহ হাদীস আছে।
আবার কিছু হাদীসের সনদ সহীহ হলেও তার একটা গোপন ত্রুটি থাকে। সেটা হলো, সালাফগণ সে অনুযায়ী আমল না করা।
এজন্য অবশ্যই আপনার নিকট সহীহ প্রমাণিত হাদীসটির ক্ষেত্রে সালাফদের আমল আছে কিনা তা দেখবেন এবং তার অর্থ ও ফিকহ বোঝার জন্য আলেমদের কথামালা বিবেচনায় রাখবেন।
🌹জ্ঞাতব্য-২: কিছু সুন্নাহ রয়েছে, যেগুলো সহীহ সনদ বিশিষ্ট মারফূ' হাদীসে পাওয়া যায় না। বরং
•সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হয় অথবা
•আলেমদের স্পষ্ট ভাষ্য থাকে অথবা
•আহলুস সুন্নাহর আলেমগণ সেটিকে সুন্নাহ বলে অভিহিত করেছেন।
এই জ্ঞাতব্য বিষয়টির অবতারণা এজন্যই করা হয়েছে, যাতে করে ইমামদের লিখিত সুন্নাহর কিতাবগুলো এবং সালাফদের আসার বিষয়ক কিতাবগুলো গবেষণা করতে মানুষ আগ্রহী হয়; কারণ এইসব গ্রন্থে এমনো কিছু সুন্নাহ এসেছে যা মারফূ' মুসনাদ গ্রন্থগুলোতে আসেনি।
🌹জ্ঞাতব্য-৩: কোনো বিষয় অনুসৃত সুন্নাহ হিসেবে সাব্যস্ত হলে এবং লোকজনের সেটা পরিত্যাগ করা স্পষ্ট হলেই কেবল সেটাকে "পরিত্যক্ত সুন্নাহ" বলা যাবে। আর এরকম সুন্নাহ কেউ জাগ্রত করলে নিজে করার সওয়াব তো পাবেই, পাশাপাশি কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে; কারো সওয়াবে কোনো কমতি করা হবে না।
ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ (হা/১০১৭) মুনযির ইবনু জারীর থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমরা ভোরের দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় তার কাছে পাদুকাবিহীন, বস্ত্রহীন, গলায় চামড়ার আবা পরিহিত এবং তরবারি ঝুলিয়ে একদল লোক আসল। এদের অধিকাংশ কিংবা সকলেই মুযার গোত্রের লোক ছিল। অভাব অনটনে তাদের এ করুণ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখমণ্ডল পরিবর্তিত ও বিষন্ন হয়ে গেল। তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন, অতঃপর বেরিয়ে আসলেন। তিনি বিলাল রাযিয়াল্লাহু আনহুকে আযান দিতে নির্দেশ দিলেন। বিলাল রাযিয়াল্লাহু আনহু আযান ও ইকামাত দিলেন। সালাত শেষ করে তিনি উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “হে মানব জাতি! তোমরা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র ব্যক্তি থেকে (আদম) থেকে সৃষ্টি করেছেন। ..... নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী"- (সূরা আন নিসা ৪ঃ ১)। অতঃপর তিনি সূরা হাশরের শেষের দিকের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেক ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতের জন্য কী সঞ্চয় করেছে সেদিকে লক্ষ্য করে"- (সুরাহ আল হাশর ৫৯ঃ ১৮)।
অতঃপর উপস্থিত লোকদের কেউ তার দীনার, কেউ দিরহাম, কেউ কাপড়, কেউ এক সা' আটা ও কেউ এক সা' খেজুর দান করল। অবশেষে তিনি বললেন, "অন্ততঃ এক টুকরা খেজুর হলেও নিয়ে আসো"। তখন আনসার সম্পপ্রদায়ের এক ব্যক্তি একটি বিরাট থলি নিয়ে আসলেন। এর ভার তার হাত বহন করতে পারছিল না। সাহাবী বলেন, অতঃপর লোকেরা সারিবদ্ধভাবে একের পর এক দান করতে থাকল। ফলে খাদ্য ও কাপড়ের দু'টি স্তুপ হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারক খাঁটি সোনার ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে হাসতে লাগল।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন উত্তম প্রথা বা কাজের প্রচলন করে সে তার কাজের সাওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে তা করবে সে এর বিনিময়েও সাওয়াব পাবে। তবে এতে তাদের সাওয়াব কোন অংশে কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে (ইসলামের পরিপন্থী) কোন খারাপ প্রথা বা কাজের প্রচলন করবে, তাকে তার এ কাজের বোঝা (গুনাহ এবং শাস্তি) বহন করতে হবে। তারপর যারা তাকে অনুসরণ করে এ কাজ করবে তাদের সমপরিমাণ বোঝাও তাকে বইতে হবে। তবে এতে তাদের অপরাধ ও শাস্তি কোন অংশেই কমবে না।"
আল্লাহই তাওফীকদাতা।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
🚦"আপনার দুনিয়া অন্ধকার" হলে লেখাটি আপনার জন্য
হে মুসলিম ভাই!
আপনার চোখে যখন পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাবে; তখন স্মরণ করুন যে, আল্লাহই হলেন আসমান ও জমিনের আলো। অতএব দুনিয়ার অন্ধকার আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
দুনিয়ার সব দরজা যখন আপনার মুখের উপর বন্ধ করে দেওয়া হয়; আপনি দুনিয়া ও আখিরাতের দয়াময় প্রভুর দরজায় কড়া নাড়ুন, সে দরজা তো বন্ধ হবার নয়। সহীহ মুসলিমে (হা/২৭৫৯) আবু মুসা রাযিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে রাসূল ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ "দিনের আলোয় পাপ করা পাপী যেন রাতের আঁধারে আল্লাহর কাছে তওবা করতে পারে, সেজন্য আল্লাহ স্বীয় হাতকে রাতের বেলা বাড়িয়ে দেন। রাতের অন্ধকারে গুনাহ করা গুনাহগার বান্দা যেন দিনের বেলায় তওবা করতে পারে, সেজন্য আল্লাহ স্বীয় হাতকে দিনের বেলায় বাড়িয়ে দেন। পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত এভাবে চলতেই থাকবে।"
শক্তিমানরা তাদের শক্তি নিয়ে আপনার উপর চড়াও হলে চিন্তিত হবেন না, বরং দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন যে, আপনার মহান প্রতিপালক মহা শক্তিধর এবং পরাক্রমশালী। আর অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য সন্নিকটে।
ধনকুবেররা স্বীয় সম্পদ নিয়ে ঔদ্ধত্য করলে (স্মরণ করুন), আল্লাহ বলেছেনঃ "মহিমান্বিত মূলত আল্লাহ; যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই; সম্মানিত আরশের অধিপতি তিনি।" -(সূরা মুমিনূন, ১১৬)
উচ্চবংশীয়রা নিজ বংশের অহমিকায় লিপ্ত হলে আল্লাহর এই কথা মনে করুন: "আল্লাহর কাছে সে-ই ব্যক্তি সম্মানিত, যে তোমাদের মাঝে যত বেশি তাকওয়াবান। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী, সম্যক অবগত।" -(সূরা হুজুরাত, ১৩)
সময় দীর্ঘ হচ্ছে, অথচ আপনার স্বপ্ন ও লক্ষ্য দূরে সরে যাচ্ছে, নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে; এরকম হলে আল্লাহর শরণাপন্ন হোন, তাঁর কাছেই চান, তাঁরই করুণা ভিক্ষা করুন; তিনি তো অতি নিকটে, আপনার দূরকে তিনি কাছের করে দেবেন, কঠিনকে সহজে পরিণত করবেন, অগম্য গন্তব্যকে নাগালের মধ্যে এনে দেবেন। আল্লাহ বলেনঃ "আর আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করলে বলে দিন, নিশ্চয়ই আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে। -(সূরা বাকারা, ১৮৬)
হে মুসলিম! আল্লাহর উপর অহঙ্কার করে তাঁকে ডাকা বাদ দিয়েন না, তাহলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই হারাবেন। আল্লাহ বলেনঃ "তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন: ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারবশতঃ আমার কাছে দোয়া করা থেকে বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।" -(সূরা গাফির, ৬০)
রাসূল ﷺ বলেছেনঃ "আল্লাহ বলেন: হে আদম সন্তান! তুমি তো আমাকে ডাকোনি, আমার কাছে আশাও করোনি, (করলে) আমি তোমার সব কিছু ক্ষমা করতে কোনো পরোয়া করতাম না।
ওহে বনী আদম! আসমান ভর্তি গুনাহ নিয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাইলে, সব গুনাহ মাফ করে দিতাম কোনো পরোয়া করতাম না।
ওরে আদম সন্তান! পুরো জমিন পরিমাণ ভুল নিয়ে আমার সাথে শিরক বিহীন অবস্থায় সাক্ষাৎ করলে, অনুরূপ মাগফিরাত নিয়ে আমি তোমার কাছে আসতাম।"
আপনি দোয়া করার জন্য রাতের শেষভাগকে বেছে নিন। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ আমাদের মহান রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন: কে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। আমার কাছে কে চাইবে? তাকে তার চাওয়া দেব। আমার কাছে মাফ চাইবে কে? তাকে ক্ষমা করে দেব।"
সর্বান্তকরণে আল্লাহর দিকে ফিরুন, দোয়া কবুলের ব্যাপারে অবিচল আস্থা রাখুন। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ" তোমরা দোয়া কবুলের ব্যাপারে দৃঢ়চিত্ত হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। জেনে রেখো, গাফেল উদাসীন অন্তরের দোয়া আল্লাহ্ কবুল করেন না।"
হে মুসলিম ভাই! যে দোয়ায় আপনি আল্লাহকে আশা করেন, তাঁর প্রতি মনোনিবেশ করেন, তাড়াহুড়ো না করেন; আপনার সে দোয়া বাস্তবিকই কবুল হবে। আবু সাঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ "কোনো মুসলিম যদি এমন দোয়া করে, যেটাতে কোনো পাপ নেই অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি নেই, তাহলে আল্লাহ এর বিনিময়ে তিনটির যেকোনো একটি দেবেন:
১) তার উদ্দিষ্ট বিষয়টি দ্রুতই দেবেন, নতুবা
২) আখিরাতের জন্য জমা রেখে দেবেন, আর নয়তো
৩) অনুরূপ কোনো বিপদ তার থেকে দূরে সরে দেবেন।
সাহাবীগণ এটা শুনে বললেন, তাহলে তো আমরা আরো বেশি বেশি দোয়া করব!
রাসূল ﷺ বললেনঃ আল্লাহ আরো অধিক দেবেন।"
অতএব আপনারা দোয়াতে মনোনিবেশ করুন। আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদেরকে রহম করুন।
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।
এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করব। তা হলো: তাওহীদের মাসয়ালাগুলোতে সাব্যস্তকরণ, দলীল গ্রহণ এবং দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্যতার (وجه الاستدلال ) দিকগুলো খুব সূক্ষ্ম। অতএব এ বিষয়গুলো ব্যক্ত করতে যেমন বক্তাকে সূক্ষ্ম হতে হয়, তেমনি শ্রোতাকেও খুব মনোযোগী হতে হয়।
এটা বলার কারণ হচ্ছে, কিছু মানুষ বেশকিছু মাসয়ালা বুঝতে জটিলতার সম্মুখীন হয়। জটিল মনে হওয়ার কারণ- হয় তারা ভালোমতো পড়েনি আর নয়তো যথাযথভাবে কয়েদ করতে পারেনি। ফলে তারা:
-হয় (মূল মাসয়ালা থেকে) কোনো শব্দকে বাদ দিয়েছে, আর নয়তো
-কোনো শর্ত উল্লেখ ছিল কিন্তু ডিলিট করেছে তারা, অথবা
-মূল অর্থ নিয়ে নিজেদের ভাষায় প্রকাশ করে।
এরকম করা সঠিক নয়। এজন্যই এই ইলমের অন্বেষী ছাত্রদেরকে শ্রুত প্রতিটি বিষয়ে গভীর ধ্যানমগ্ন হতে হয়। কারণ প্রতিটা মাসয়ালারই কিছু নিয়ম-কানুন ও শর্ত শারায়েত থাকে। পাশাপাশি কোনো কোনো সময় কিছু মাসয়ালায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়, তো তখন কোনো ছাত্র হয়তো মাসয়ালার একটামাত্র অবস্থা শুনেছে, যেটার আরো বিস্তারিত আলোচনা দরকার, কিন্তু এখানে সংক্ষেপে আলোচিত হয়েছে।
আর এটা তো জানা কথা যে, সংক্ষিপ্ত ভাষায় কথা বলা আর বিস্তারিত আলোচনা করা দুটো এক নয়।"
✍️শায়খ সালেহ আলুশ শায়খ হাফিযাহুল্লাহ।
📚 আত-তামহীদ লিশরহে কিতাবিত তাওহীদ, ১৪৪ পৃষ্ঠা।
🚦সব সমস্যার সমাধান
আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়তে অটল থাকা, দ্বীনে ফিরে আসা এবং সবক্ষেত্রে তাকওয়া আঁকড়ে ধরা সব ধরনের সঙ্কট থেকে মুক্তির উপায় ও সামাজিক যাবতীয় সমস্যার সমাধান।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তা,
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা,
বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরক্ষা,
সামাজিক শৃঙ্খলা,
আত্মিক প্রশান্তি,
সামরিক নিরাপত্তা,
সবগুলোই আল্লাহর দ্বীনে অবিচল থাকার উপর নির্ভর করছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ اللّهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ
"নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। -[সূরা রা'দ, ১১]
অন্যত্র বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ
নিশ্চয় যারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ’ তারপর তাতে অবিচলিত থাকে, তাদের নিকট ফিরিশতা অবতীর্ণ হয়ে বলে, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ নাও। -[সূরা ফুসসিলাত, ৩০]
আরো বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
নিশ্চয় যারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ’ অতঃপর এই বিশ্বাসে অবিচলিত থাকে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। -[সূরা আহকাফ, ১৩]
অন্যত্র বলেনঃ
وَأَلَّوِ اسْتَقَامُوا عَلَى الطَّرِيقَةِ لَأَسْقَيْنَاهُم مَّاء غَدَقاً
আর তারা যদি সত্য পথে প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাহলে তাদেরকে আমি অবশ্যই প্রচুর পানিতে সিক্ত করতাম। -[সূরা জিন, ১৬]
আল্লাহ আরো বলেনঃ
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُواْ وَاتَّقَواْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ وَلَـكِن كَذَّبُواْ فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ
আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করেছিল; ফলস্বরূপ আমরা তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছি। -[সূরা আ'রাফ, ৯৬]
ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা ‘ঈনাহ’ (নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে পুনরায় মূল্য কম দিয়ে ক্রেতার নিকট হতে ঐ বস্তু ফেরত নিয়ে) ব্যবসা করবে এবং গরুর লেজ ধরে কেবল চাষ-বাস নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে, আর জিহাদ ত্যাগ করে বসবে, তখন আল্লাহ তোমাদের উপর এমন হীনতা চাপিয়ে দেবেন; যা তোমাদের হৃদয় থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত দূর করবেন না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের দ্বীনের প্রতি প্রত্যাবর্তন করেছ। -[সহীহুল জামে'/৪২৩]
✍️শায়খ মুহাম্মাদ বিন উমার বাযমূল হাফিযাহুল্লাহ।